রাজা শান্তনু একদিন যমুনাতীরবতী বনে বেড়াতে বেড়াতে নাকে তীব্র সুগন্ধ পেলেন। তিনি সেই সুগন্ধের অনুসরণ করে অপরূপযৌবনবতী এক কন্যানে দেখতে পেলেন। মেয়েটির রূপে মুগ্ধ রাজা তাঁর নাম পরিচয় জানতে চাইলেন। তখন মেয়েটি জানালো তার নাম সত্যবতী, সে দাস (ধীবর / জেলে) রাজার কন্যা। পিতার নির্দেশে সে যমুনায় নৌকা চালিয়ে মাছ ধরছে।
রাজা শান্তনু দাসরাজের কাছে গিয়ে তাঁর কন্যা সত্যবতীকে চাইলেন। কিন্তু দাসরাজ বললেন তাঁর মেয়ে সত্যবতীকে ধর্মপত্নী করতে হবে এবং সত্যবতীর গর্ভজাত পুত্রকেই পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেই সে কন্যাদান করবে।
শান্তনু এই শর্ত মেনে নিতে পারলেন না, কারণ আগেই তিনি দেবব্রতকে যুবরাজ হিসেবে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি রূপবতী কন্যা সত্যবতীকে ভাবতে ভাবতে রাজধানীতে ফিরে গেলেন। কিন্তু কোনো কাজেই আর তার মন লাগেনা।
দেবব্রতের ঘটকালি
পিতাকে চিন্তাকুল ও মনমরা দেখে দেবব্রত কারণ জানতে চাইলো।
তখন রাজা শান্তনু বললেন - "পুত্র, আমার মহান বংশে তুমিই একমাত্র সন্তান। কিন্তু মানুষ নশ্বর, মরনশীল। তােমার কিছু ঘটে গেলে আমার বংশলােপ পাবে। তুমি শতপুত্রেরও অধিক, সেজন্য আমি বংশ রক্ষার জন্য আবার বিবাহ করতে চাইনা। তােমার মঙ্গল হক এই কামনাই করি। কিন্তু গুণীজনে বলেন- পুত্র না থাকা আর একটিমাত্র পুত্র থাকা একই কথা। তোমার অবর্তমানে আমার বংশের কি হবে এই চিন্তাই আমার দুঃখের কারণ।"
দেবব্রত তখন মন্ত্রীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে তাঁর পিতার দাসকন্যাকে বিবাহ করতে চাওয়ার বিয়ষটি জানতে পারলো। তাই দেবব্রত মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে দাসরাজের কাছে গেলেন এবং পিতার জন্য কন্যা প্রার্থনা করলেন।
দাসরাজা জানালো এই বিয়েতে তার অমত নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজা হবে দেবব্রত, আর সত্যবতীর সন্তানেরা হবে সৎ ভাই দেবব্রতের হুকুমের গোলাম। তাই দাসরাজ তার কন্যাকে রাজার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি।
দাসরাজের বক্তব্য শুনে দেবব্রত তাঁকে কথা দিলো সত্যবতীর গর্ভে যে পুত্র হবে সেই রাজত্ব পাবে।
দেবব্রতের এই প্রতিজ্ঞা শুনেও দাসরাজ সন্তুষ্ট হতে পারল না। কারণ দেবব্রত রাজত্ব দাবি না করলেও ভবিষ্যতে তাঁর সন্তানেরা রাজত্ব দাবি করতে পারে।
দাসরাজের এই কথা শুনে দেবব্রত রাজত্ব ত্যাগ করার সাথে সাথে আরো প্রতিজ্ঞা করে যে সে ব্রহ্মচারী হবে, কখনই বিয়ে করবেনা, ফলে তার কোনো পুত্রও হবে না।
দেবব্রতের প্রতিজ্ঞা শুনে এবার দাসরাজ সন্তুষ্ট হয়ে নিজের কন্য সত্যবতীকে রাজা শান্তনুর সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হল। ঠিক তখন আকাশ থেকে অপ্সরা ও দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করে বললেন; এর নাম ভীষ্ম হল।
এবার ভীষ্ম সত্যবতীকে রথে চড়িয়ে হস্তিনাপুরে নিয়ে এলো। ভীষ্ম তার পিতাকে সমস্ত বত্তান্ত জানাল। পুত্রের জাকে খুশী হয়ে শান্তনু পত্রকে বর দিলেন- "তুমি যতদিন বাঁচতে ইচ্ছা করবে তত দিন তােমার মত্যু হবে না, তােমার ইচ্ছানুসারেই মত্যু হবে।"
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫
====================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১৬