somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস - কুষ্ঠ নিবাস - পর্ব - ১৬

১৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তার প্রশ্ন শুনেই রহমত মিয়া বুঝে ফেলল, মাছ বড়শি গিলে ফেলেছে। এবার ধীরে সুস্থে মাছটাকে নিয়ে খেলতে হবে। তারপর সুযোগ বুঝে হ্যাচকা টান। একটানে একেবারে খাওয়ার প্লেটে।
রহমত মিয়া শাহিদার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসল। বলল, ‘দুই জনের নামে বিচার দেওন যাইব না। সম্ভব না। তাইলে বিচারে গণ্ডগোল লাইগ্যা যাইব। তুমি নালিশ দিবা একজনের নামে। আর হেইডা হইব আজগর আলী।’
‘কিন্তুক এইডা তো মিছা কতা’, শাহিদার মা সরল চোখে তাকিয়ে রইল।
‘মিথ্যার কী অইল ?’ রহমত মিয়া বোঝাতে চেষ্টা করল,‘আজগর আলী কেমনে পরমান করব হেয় আকাম করে নাই ? হের ঘরে তুমার মাইয়া আছিল। হেয় একলা মানুষ। হুনো অতো সত্য মিথ্যা বাইচ্ছ না। অহন জান বাঁচানো ফরজ। আজগর আলীর ঘরের মধ্যে আকামডা অইছে, অহন কেমনে বুজলা যে আজগর আলী জড়িত না ?’
শাহিদার মা জবাব দিল না। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আউলা আউলা লাগছে। মনে হচ্ছে, একটি মাকড়সা তার মাথার ভেতর অনবরত জাল বুনে চলেছে।
রহমত মিয়া খানিকটা ভেবে নিল। পরিকল্পনা মতো সব কিছু এগুচ্ছে। আরেকটু এগিয়ে নিতে পারলেই কাজ শেষ। এবার আরেকটা তীর ছুঁড়ে দিল সে। বলল, ‘ তোমার মাইয়ারে বিয়া দেওন লাগত না ?’
শাহিদার মা রহমত মিয়ার দিকে তাকাল। তার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠল। কান্না ভেঁজা কণ্ঠে বলল, ‘অহন আমার মাইয়ারে বিয়া করব কেডা ?’
রহমত মিয়া ঠোঁট বাঁকা করে হাসল। রিভলভিং চেয়ারটাকে অনর্থক দোলাল। বলল, ‘করব, করব। হেই বেবস্তাই করমু। শুদু একটা বুদ্ধি খাটাইতে হইব। সত্য মিথ্য হিসাব করনের সময় এইডা না।’
শাহিদার মায়ের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সে নিচু হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনের ঝড় ঝাপটা তাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে।
রহমত মিয়া তাকে বোঝাতে লাগল। বলল, ‘আমি যেইডা কই, ঠাণ্ডা মাতায় হুনো। আকাম কুকাম যত জনই করুক, আমরা নালিশ দিমু একজনের নামে। আর হের লগেই তোমার মাইয়ার বিয়া দিমু।’
‘হাচা কইতাছেন ?’ শাহিদার মা ঘাড় উচিয়ে তাকাল। তার চোখে বিদ্যুৎ খেলে গেল।
রহমত মিয়া চেয়ারের হাতলে হাত বোলাতে লাগল। বলল, ‘ হুনো, বিচারের চেয়ে অহন বেশি দরকার তোমার মাইয়া বিয়া দেওন। ঠিক কি না ?’
‘হ। নুরু মিয়া আমার মাইয়ারে বিয়া করলে আমার বিচার লাগত না।’
রহমত মিয়া হাসল। কুটিল হাসি। মহিলাটা আসলেই বোকা। এখনও কত স্বপ্ন দেখে। বলল, ‘কী সব উল্টা পাল্টা কতা কও। মাতাডা একটু খাটাও। নুরু মিয়া কুনো দিনও তোমার মাইয়ারে বিয়া করব না। নুরু মিয়ার বিচার করব, এমুন বেডা এই টাউনে নাই। বিচারের পরে কান্ধের থিকা কল্লা নামায়া দিব। বিয়া দূরের কতা, মা-মাইয়া জান হারাইবা। তারচেয়ে আমি যেই বুদ্ধি করছি, হেই কাম কর।’
‘কী করমু ?’ শাহিদার মা উ উ করে কাঁদতে শুরু করল।
‘হুনো, কান্দাকাটি কইরা কুনো লাভ নাই। আমি যা কই, হুনো। আজগর আলীর নামে বিচার দেও। এতে এক কামে দুই কাম হইব। এক, তুমি বিচার পাইবা। দুই, আজগর আলীর লগে তোমার মাইয়ার বিয়ার ব্যবস্তা করন যাইব।’
‘কিন্তু ....’
এবার রহমত মিয়া ক্ষেপে উঠল। বলল, ‘অতো কিন্তু থাকলে বাইত যাও গা। আমারে বিরক্ত কইর না। আমার বহুত কাম।’
শাহিদার মা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগল। রহমত মিয়া অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। বাইরে আবার ভিড় জমে যাচ্ছে না তো ? লোক জমে গেলে তো মুশকিল।
শাহিদার মা আঁচল দিয়ে নাক মুছছে। লালা পড়ে মেঝেটা নোংরা হয়েছে। এই বুড়ি যতবার আসে, ততবার মেঝে নোংরা করে রেখে যায়।
শাহিদার মা কান্নার দমক আটকে দিয়ে বলল, ‘সাব, আমি অহন কই যামু ? কার কাছে যামু ?’
রহমত মিয়া ফ্যাঁসফেসে গলায় বলল, ‘এই জন্য তো সোজা বুদ্ধিটা দিছি। আরেক বার চিন্তা কইরা দেহ। দুই জন মিল্যা আকাম করছে। একজনের বিচার আমরা করতে পারমু না। কিন্তুক আরেক জনের লগে তোমার মাইয়ার বিয়া দিতে পারমু। এই জন্যই কইছিলাম, আজগর আলীর নামে বিচার দেও। তোমার ভালোর লিগাই তো কইতাছি।’
‘ঠিক আছে, আমার মাইয়ারে জিগায়া লই।’
‘জিগাও। তয় তোমার মাইয়া স্বীকার যাইব না। তোমার মাইয়া বহুত শরমিন্দা। কিন্তু আজগর আলী আর নুরু মিয়ারে তো আমি চিনি। হারামজাদারা যেই মাইয়ার লগে ফুর্তি করে এক লগেই করে। আমি হাতেনাতে ধরছি। ’
‘কিন্তুক আমার মাইয়া যুদি আজগর আলীর নাম না কইতে চায় ?’
‘মাইয়ারে রাজি করাইবা। অহন তোমার একমাত্র কাম হইল শাহিদারে রাজি করানো। একবার রাজি করাইতে পারলে চিন্তা নাই। বিয়া শাদী লাগাইয়া দিমু। তুমি বিরাট বড়লোক জামাই পাইবা। মা-মাইয়া সুখে থাকবা।’
রহমত মিয়ার কথার ভঙ্গিতে শাহিদার মা হেসে ফেলল। অশ্রু ভরা চোখে হাসি হাসি মুখটা দেখাচ্ছে অদ্ভুত। কিন্তু তার এই হাসি বেশিক্ষণ থাকল না। দুশ্চিন্তার ছায়া এসে পড়ল তার চোখে। সে চোখ নামিয়ে ফেলল। ভাবছে।
রহমত মিয়া তার ভুড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ‘তোমার মামলা ডিশমিশ। তুমি বাইত যাও। তোমার মাইয়ারে রাজি করাও। মনে রাইখখো, এই কাম যুদি করতে না পার, তয় মা-মাইয়া সারা জীবন গলাগলি কইরা কান্দন লাগব। তোমার মাইয়ারে কই বিয়া দিবা ?’
‘ঠিক আছে, রাজি করামু’, শাহিদা মা আঁচলে মুখ মুছল,‘আপনে এট্টু দয়া কইরেন।’
রহমত মিয়া খেঁকিয়ে উঠল, ‘দয়া মাইনে ! তোমার সব কামে আমি আছি। কিন্তুক একটা কথা। আমি যে তোমার লগে আছি, হেইডা কারো লগে কইবা না। শাহিদারেও না। কাউরে কইলে আমি কিন্তুক তোমার লগে নাই। তহন বুজবা ঠ্যালা।’
‘না, আমি কাউরে কমু না।’
‘ভালো, এইবার বাইত যাও। আমার এট্টু কাম আছে।’
শাহিদার মা তার পায়ে ধরে সালাম করল। রহমত মিয়া পা সরিয়ে নিতে গিয়েও সরিয়ে নিল না। শাহিদার মা উঠে দাঁড়িয়ে ঘোমটা টানল। তারপর বেরিয়ে চলে গেল।
রহমত মিয়া নিজের কুটবুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে গেল। এতগুলো মিথ্যা কথা সে অনর্গল বলে গেল কিভাবে ? ভিলেন খালি সিনেমায় থাকে না, বাস্তবেও থাকে। বাস্তবের ভিলেনরা সিনেমার ভিলেনের থেকে বেশি মারাত্মক হয়। সিনেমার ভিলেন হেরে যায়, বাস্তবের ভিলেনকে হারানো কঠিন।
সে মনে মনে ফাহমিদাকে ধন্যবাদ দিল। ফাহমিদা না থাকায় তার হিম-শীতল মাথা কাজ করছে। ঠাণ্ডা মাথাটা কাজ করছে বলেই তার পক্ষে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে।
রহমত মিয়ার পাজামা খুলে নাচতে ইচ্ছে করছে। অফিস বন্ধ করে ন্যাংটো হয়ে নাচলে কেমন হয় ? উহ, কী আনন্দ ! বাবা আজগর আলী, তোমার দিন শেষ। কুল্লে খতম।

চলবে ...

প্রথম পর্বদ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব একাদশ পর্ব দ্বাদশ পর্ব ত্রয়োদশ পর্ব চতুর্দশ পর্ব পঞ্চদশ পর্বসপ্তদশ পর্ব


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×