somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

২৪ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিস্তি-১৪

খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল অহনার। তখন ঘড়িতে ৫ টা ১০। অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুমাতে পারলো না। মাথার যন্ত্রণাটা নেই। খুব হালকা লাগছে। তবুও কেন ঘুম আসছে না বুঝতে পারছে না অহনা। আজ ভার্সিটি খোলা। ছাত্র আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কতদিন দেখা হয় না। কথা হয় না। আজ সময় হাতে রেখে ক্যাম্পাসে যাবে এমনটাই ভেবে রেখেছে অহনা। তাই বলে এতো সকালে? এর কোন অর্থ হয়! এমনও নয় যে সেই আহাম্মকটা ফোন করেছে। ওর কথা মনে পড়তেই বুকে কেমন শূন্যতা অনুভব করলো অহনা। কি যেন নেই। অনেকদিন লোকটা ফোন করে না। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে সে- ভার্সিটি বন্ধ থাকলে লোকটা ফোন করে না।
অহনা ঘুমকাতুরে এটা নিশ্চয়ই জানে লোকটা। যতদিন ফোন করেছে বেশির ভাগ সময়ই সকালে। কোন কারণে ফোন না এলে ওই দিন ভার্সিটিতে দেরি হয়ে যেত তার। আজ এই প্রথম লোকটার জন্য এক ধরনের টান অনুভব করলো অহনা। লোকটা যে তার অনেক কিছুরই খবর রাখে এতে কোন সন্দেহ নেই।
ভার্সিটির দীর্ঘ বিরতিতে মাঝে-মধ্যে ফোন করতো কেবল নীদ। সেই একই গল্প। হাজবেন্ড এটা করেছে, ওটা করেছে। আজ এখানে খাওয়াতে নিয়ে গেছে। কাল ওখানে ঘুরতে নিয়ে গেছে। আজ এতবার সোহাগ করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন কি রাত তিনটায়ও ফোন করে সেই হাজবেন্ডের গল্প- জানিস, খুব অশান্তিতে আছি। ঘুমাতে পারছি না। এক মুহূর্তের জন্য ও আমাকে মিস করতে চায় না। এই দেখ- এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আমি যখন শুবো, দেখা যাবে চোখটা লেগেছে আর অমনি তার ঘুম শেষ। আবার শুরু সেই অত্যাচার- এ কি সহ্য হয়? নাকি সহ্য করার মতো- তুই বল!
নীদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। জীবনের সোনালি সময় পার করছে নীদ এতে কোন সন্দেহ নেই। তার সুখী সুন্দর জীবনের গল্প শুনতে ভাল লাগে অহনার। তবে অবাক করার বিষয়- দু’মাস ধরে নীদের কোন খোঁজ নেই। ফোন করলে কখনও রিং হয় কেউ ধরে না। আবার কখনও এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। আজ কলেজে গিয়ে ওকে আচ্ছা করে ধোলাই দিতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা ভাব এলো অহনার। অমনি ফোন। বাজছে তো বাজছেই। চোখ না খুলেই বিরক্তি নিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোনটা কানের কাছে ধরে-
হ্যালো।
শুভ সকাল। আহাম্মক নম্বর নয় বলছি। এখন সকাল ৮টা। দীর্ঘদিন পর ভার্সিটি খুলেছে। হাতে একটু সময় নিয়ে গেলে ভাল হয়। সবার সঙ্গে দেখা; কুশল বিনিময়- একটু সময় লাগবে বৈকি।
ধড়ফরিয়ে উঠে বসলো অহনা। উদ্দেশ্য লোকটার সঙ্গে কথা বলা। তার পরিচয় জানা। কিন্তু তার আগেই লাইন বিচ্যুত। এই প্রথম সে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আগ্রহী হলো। অথচ কোন কিছু বলার আগেই লাইন কেটে দিল লোকটা। অহনা ফিরতি রিং করলো তাকে। রিং বেজেই চলেছে, ধরছে না। এর আগেও বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল অহনা। উদ্দেশ্য- তাকে কিছু কথা শোনানো। কোনবারই লোকটি ফোন রিসিভ করেনি। আজও করলো না।
সাড়ে ন’টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছলো অহনা। মধুর ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হৃদ। সরাসরি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো অহনা। বললো- তোমার সঙ্গে কথা আছে। একটু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলো। হৃদ একটু অবাক হলো। বললো-
আগে কি কখনও আমাদের কথা হয়েছে?
না।
তাহলে।
চোখাচোখি হয়েছে।
তাতেই কি একজনকে তুমি বলে সম্বোধন করা যায়? না করা উচিত?
হ্যাঁ যায়। সাবজেক্ট আলাদা হলেও তুমি আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি।
ঠিক আছে। কিছু বলার থাকলে এখানেই বলুন।
ফোনে তো ঠিকই তুমি তুমি করো কথা বলো। এখন আপনি আপনি করছো কেন?
মানে? আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
তা বুঝবে কেন? বুঝলে তো ধরা পড়ে যাবে। এখন বলো কথা শেষ না করে লাইন কেটে দিলে কেন?
আমার মনে হয় আপনি ভুল করছেন।
তাতো বটেই। ক্যাম্পাসে আসার সময় প্রায়ই রিকশার পিছু নেয়া। আমার বলা কথা আমাকে ফিরিয়ে দেয়া। ভুল তো বটেই।
মানে? আপনি কি বলছেন এসব! আমি তো...
আর কখ্‌খনও ফোন করবে না আমাকে। আহাম্মক জানি কোথাকার।
কথাগুলো বলে হড়হড় করে চলে গেল অহনা। ক্যাম্পাসের চারপাশে ঘুরে নীদকে খুঁজছে সে। কোথাও তাকে পাওয়া গেল না। মোবাইলে ফোন করলো। ফোন বন্ধ। হতাশ হয়ে কাসে চলে গেল অহনা।
ক্লাস শেষে অহনা ভাবলো- সে নীদের খোঁজে তার বাসায় যাবে। হঠাৎ করে এমন উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইবে। নাকি স্বামীর সঙ্গে ইতালি চলে গেল নীদ! এসব ভাবতে ভাবতে নীদদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। কলিং বেল টিপতে বারো-চৌদ্দ বছর বয়সের একটি মেয়ে দরজা খুললো। জানতে চাইলো- কারে চান?
অহনা বললো- নীদ আছে? এটা নীদদের বাসা না?
হ নীদ আপাগো বাসা।
নীদ আছে?
না। নীদ আপা হাসপাতালে।
হাসপাতালে! কেন কি হয়েছে নীদের।
অসুস্থ।
কোন হাসপাতালে?
পিজি হাসপাতালে।
ঠিকানা নিয়ে হাসপাতালে গেল অহনা। খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লাগলো। নীদকে চেনা যাচ্ছে না। শুকিয়ে গেছে। গায়ের রঙ কালো হয়ে গেছে। গাল ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। ঠোঁটগুলো এত কালো দেখাচ্ছে যে, মনে হচ্ছে চেইন স্মোকার। চোখ দু’টো যেন বাইরে বেরিয়ে এসেছে নির্দিষ্ট স্থান থেকে। মনে হচ্ছে দু’টি মার্বেল পাথর বসিয়ে রাখা হয়েছে। শেষ যে জামাটি পড়ে ক্যাম্পাসে এসেছিল ওইটিই তার পড়নে। জামাটি তার গায়ে ফিটিং ছিল। মানিয়েছিল বেশ। আজ ঢিলেঢালা জামাটি দেখে মনে হচ্ছে ধার করে অন্য কারও জামা পড়ে আছে নীদ। এই ক’ মাসে একি চেহারা হয়েছে তার।
সিটের ওপর হেলান দিয়ে বসেছিল নীদ। অহনাকে আসতে দেখে সে শুয়ে পড়লো। অবাক হলো অহনা। একি সেই নীদ? যে নীদ তাকে দেখলে লাফ দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতো। কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো যে নীদ- সে কিনা তাকে দেখে নির্বিকার। প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেল অহনা। তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে সিটের কাছে গেল সে। মাথার কাছে দাঁড়ালো। তাকে মাথার কাছে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো নীদ। অহনা তার মাথায় হাত দিয়ে বললো- কিরে নীদ, কি হইছে তোর। তুই কি আমাকে দেখতে পাস নাই। এই কি অবস্থা তোর। কি হয়েছে?
নীদ চোখ বন্ধ করে আছে। কোন কথা বলছে না। তার চোখ বেয়ে অশ্রম্ন ঝরছে। অহনা আবার বললো-
নীদ, এই নীদ, চোখ খোল। বল তোর কি হয়েছে? তুই অসুস্থ অথচ আমাকে একবারও ফোন করে জানালি না। এই নীদ, কথা বলছিস না কেন? কথা বল। চোখ খোল।
অহনার চোখে পানি। সে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেছে। নীদের পায়ের কাছে বসে আছে তার মা। তার চোখেও পানি। তার দিকে তাকিয়ে অহনা বললো- খালাম্মা কি হয়েছে নীদের।
নীদের মা কথা না বলে হু হু করে কেঁদে ওঠলো। অহনা তার কাছে যেতেই তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
অহনা যতক্ষণ হাসপাতালে ছিল একবারের জন্যও চোখ খুললো না নীদ। সে শুধু কেঁদেছে। তার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি। নীদের মায়ের কাছ থেকে অহনা জানলো- মরণব্যাধি এইডস-এর জীবাণু বহন করছে নীদ।

চলবে
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮
নগ্নবেলা-৯
নগ্নবেলা-১০
নগ্নবেলা-১১
নগ্নবেলা-১২
নগ্নবেলা-১৩
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×