somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৯

০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | পর্ব - ৬ | পর্ব-৭ |পর্ব-৮

নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার এমন উদাহরণ বোধহয় আমি ছাড়া আর কেউ দেখাতে পারবে না। অন্যদের বিভ্রান্ত করতে গিয়ে এখন আমি নিজেই মহা গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছি। যদিও এই গ্যাঁড়াকল থেকে উদ্ধার পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তবুও বলব বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। অনেকটা মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া। বোবার কোন শত্রু নেই এই কথাটির উপর থেকে আস্থা উঠে যাচ্ছে। বোবা সাজতে গিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরছি। গতকাল রাতে আম্মা আমাকে ওনার রুমে ডাকলেন। আমি ভেবেছিলাম হয়তো এমনি কথা বলার জন্য ডেকেছেন। আম্মার রুমে ঢুকে দেখি সেখানে ভাইয়া ভাবী উভয়ে উপস্থিত। ভাবীকে এমনিতে আমার বিভীষিকার মত মনেহয়। আর যখন দেখলাম ভাইয়া, আম্মা ওনারাও আছেন তখন আমি বুঝলাম ঘটনা গুরুতর। আমার পেছন পেছন দেখি আমার ছোট বোন নায়লা ও হাজির। আমি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি। না জানি কপালে কি আছে? নায়ল হল আম্মার সেক্রেটারী। ঘরের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সব তথ্য আম্মার কানে দেয় নায়লা। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আম্মার নির্দেশ জারী করে আবার আম্মার প্রতিনিধি হয়ে কথাও বলে। আম্মার ভয়ে কেউ কিছু বলে না ওকে। আমরা সবাই ওকে আদর করি খুব। ছোট বোন বলে কথা। আজকে মনেহয় নায়লা আম্মার প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলবে। কারণ কথা প্রথমে ওই বলল -

"ভাইয়া তুই যে মেয়েটাকে দেখে আসলি সেই ব্যাপারে আমাদের এখনো পর্যন্ত কিছু্ই বলিস নি। কারণ কি?"

আমি মনে মনে বললাম ওরে বুড়ি তুই এত পাকনামি শিখেছিস কখন? আজকে থাপ্পর দিয়ে তোর দাঁত সব ফেলে দেব। যদিও এটা মনেই রাখতে হবে। সরাসরি বললে আম্মা আমার দাঁত একটাও রাখবে না এটা শিওর। আমি নায়লার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজকেও কিছু বলব না। চিল্লা চিল্লি যা করার করুক।

"দেখ ভাইয়া তুই এটা নিশ্চই জানিস মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। আর আমরাও বুঝতে পারছি যে তুই লজ্জ্বায় কিছু বলতে পারছিস না। কোন সমস্যা নেই তোকে কিছুই বলতে হবে না। কালকেই আম্মা আর ভাইয়াকে পাঠানো হবে বিয়ের কথা ফাইনাল করার জন্য"

নায়লার কথা শুনে আমার ঘাম ছুটে গেল। হায়! হায়! আমিতো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারিনি পাটাই কুড়ালে মেরে দিয়েছি। মাথায় হাজার কিলোমিটার বেগে চিন্ত চলছে। কি করা যায়? সিদ্ধান্ত নিলাম আগে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। তাই হাসি মুখে বললাম -

"এটাতো সুখবর। তা কার বিয়ে ফাইনাল করবে?"

নায়লা রেগে গিয়ে বলল "ন্যাকামো করছিস কেন? কার বিয়ে আবার তোর বিয়ে। বুড়ো হয়ে গেছিস দুই দিন পড়ে চুল দাড়ি পাকা শুরু হবে"

"দাড়ি পাকবে কমা পাকবে তবেই না কলপ কোম্পানীগুলোর ব্যবসা ভাল হবে।"

"দেখ বেশি কথা বলবি না। ওই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল। আম্মা, ভাবী, ভাইয়া সবার পছন্দ হয়েছে ওই মেয়েটিকে"

"ভাইয়া তুমিও !!!! দেখ আমি সবাইকে বলছি আমি এখন বিয়ে নিয়ে মোটেও চিন্তা করছি না। এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।"

"তাহলে এতদিন চুপ করে ছিলি কেন?"

"আমার ইচ্ছা" বলেই আম্মার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম যাক বেঁচে গেছি। আরেকটু হলেই গলায় ফাঁস পরতো।

আজ সকালে অফিসে এসে ঢুকতেই বরাবরের মত আমার সেক্রেটারি স্বাতী হোসেইন হাজির হলেন এবং বরাবরের মতই তিনি আমার কুশলাদি সাথে ফ্রি হিসেবে ভাবীর (যার কোন অস্তিত্ব নেই) কুশলাদি জানতে চাইলেন। এরপর ওনার মুখে যা শুনলাম তারপর আমি আমার অভিধানে পুলকিত, মোহিতো ইত্যাদির মত একটা শব্দ সংযোজন করলাম "অবাকিত"। কারণ তার কথাগুলো এতই অবাক করার মত এই যে সেই অবাকের পরিমাণ উল্ল্যেখ করতে গেলে এই অবাকিত শব্দটি ব্যবহারের বিকল্প আর কিছু্ই খুঁজে পেলাম না। ভদ্রমহিলার কথাগুলো ছিল ঠিক এমন -

"স্যার সেদিন আপনাকে বলতে পারিনি আপনার মামার অসুস্থতার কথা শুনে আপনি তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেলেন।"

"কি বলতে পারেন নি?"

"ওই যে আমার শ্বশুড়ের মৃত্যুতে আমি কেন খুশি ছিলাম ওই কথাটি"

"ওহ! বলেন শুনি" আমার খুব একটা শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তবুও ভদ্রতা বশত শুনতে চাওয়া।

"আসলে স্যার আমার শ্বশুড় মারা গেছেন ৪ বছর আগে। সেদিন আমি ছুটি নিয়েছিলাম আমার হাজবেন্ডের সাথে রাঙামাটি যাবার জন্য। অফিসে কাজের যা চাপ ছিল তাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম আপনি আমাকে ছুটি দিবেন না। তাই এই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছিল।"

আমি এক কথায় নির্বাক হয়ে গেলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পরে বললাম -

"আপনি কি জানেন আপনি আমাকে এই কথা বলে কত বড় ভুল করেছেন?"

"স্যার আমি কোন ভুল করিনি। কারণ আমি জানি আপনি আমাকে কোন শাস্তি দিবেন না।"

কি বলব বুঝে উঠতে না পেরে ভদ্রমহিলাকে বললাম চলে যেতে। ভদ্রমহিলা চলে যাবার পরও অনেকক্ষন আমি কাজে মন বসাতে পারলাম না। দেখতে দেখতে লাঞ্চ টাইম হয়ে গেল। লাঞ্চ করে অফিসে আসতেই মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনলাম -

"কেমন আছেন?"

"জ্বী ভাল আছি। আপনাকেতো চিনতে পারলাম না"

"কাল আপনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন মনে নেই?"

"ওহ! আপনি? কেমন আছেন?"

"জ্বী ভাল আছি। কালতো আপনি আমাকে ঘাবড়ে দিয়েছিলেন। আমার চাচার সাথে ওভাবে কথা বলার সাহস কারো হয় না। আর আপনি যেভাবে ওনাকে মানসিক রোগী বললেন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম না জানি কি হয় এখন।"

"আমি হেসে উঠলাম। আমি নিজেও ভয়ে ছিলাম। এই বুঝি দেড় মণ ওজনের পাঞ্চ ঝেরে বসেন উনি। তবে এখন বুঝতে পারছি উনি আমাকে আর কিছুই বলবেন না। একদিক দিয়ে ভালই হল আপনার সাথে দেখা করতে গেলে আর ধোলাই খাওয়ার ভয় থাকবে না "

দুজনেই একযোগে হেসে উঠলাম। একদিন সময় করে যাব ওনার গান শুনতে এ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আজকেই যাব। দারুন সারপ্রাইজ হবে।

চলবে...................
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×