গাড়িটা থেমে গেল।
-কি ব্যাপার ড্রাইভার সাহেব? এম্বুলেন্স থামালেন যে? আমি জানতে চাইলাম।
-স্যার, সামনে পুলিশ। গাড়ি থামানোর জন্য বলল।
-উনাকে বলেন এটা এম্বুলেন্স, গাড়ীতে থাকা রোগীর অবস্থা সিরিয়াস।
ড্রাইভার কাচ নামিয়ে গলা বের করল। -স্যার, গাড়ীতে রোগী আছে, যদি যাইতে দেন...
-চোপ শালা শুয়োরের বাচ্চা। ট্রাফিক সার্জেন্ট তার হাতে থাকা লাঠিটা উচিয়ে ধরে।
-দেখলেনতো স্যার, ট্রাফিক সার্জেন্টগুলা কেমন।
ড্রাইভারের মুখ দেখে আমার নিজেরই মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কিছুই করার নেই। আব্বার অবস্থা খারাপ, সময়মত হাসপাতালে পৌছাতে না পারলে যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে।
আমি নিচে নামলাম। রাস্তা ক্লিয়ার, তবুও সার্জেন্ট আমাদের এম্বুলেন্সটা আটকে রেখেছে। আজব তো।
আমি সার্জেন্টের দিকে এগিয়ে গেলাম। -স্যার...
-কি চাই? সার্জন জানতে চাইল।
-স্যার এম্বুলেন্সে আমার আব্বা আছেন। উনার অবস্থা সিরিয়াস।
-তো? সার্জেন্টের নিরুত্তাপ প্রশ্ন।
-স্যার, রাস্তাতো ক্লিয়ার, যদি আমার যেতে দিতেন...
-একবার বললাম না গাড়ি যাবে না।
-এখন পৌছাতে না পারলে বিপদ হয়ে যাবে।
-এই রাস্তা দিয়ে ভিআইপি গাড়ি যাবে। তার আগে সিগনাল ছাড়া যাবে না।
-স্যার, আমাদের দুইটা মিনিট সময় দেন। আমরা রাস্তা পার হয়েই ওই গলিটা দিয়ে বেরিয়ে যাব। কোন গাড়ির চলাফেরায় কোন সমস্যা হবে না।
ঠাশশ...
শুধু আমি কেন, পৃথিবীর কোন মানুষ সম্ভবত এরকম অবস্থায় কোন ছেলের গালে চড় মারার কথা ভাববে না।
-খা**র পোলা, কতক্ষণ ধইরা বলতেছি এখন গাড়ি যাইব না, কথা কানে যায় না? তোর বাপ মইরা গেলে আমার কি? আমি নিজের চাকরি বাচামু না???
ট্রাফিক সার্জেন্ট তখনো সমানে চিৎকার করে চলেছে। আমার কানে তার কোন কথা ঢুকছে না, মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন ঘুরছেঃ দেশটা এত দ্রুত শুয়োরের বাচ্চায় ভরে যাচ্ছে কেন?
গল্পঃ শুয়োরের খোঁয়াড়
১৫.০৭.১৮
অনেকক্ষণ ধরে জ্যামে বসে আছি।গাড়িটা একই জায়গায় আটকে আছে বিশ মিনিট ধরে, আরো কতক্ষণ এভাবে আটকে থাকবে কে জানে।
বসে বসে বোর হচ্ছিলাম, ভাবছিলাম কি করা যায়।
এরই মধ্যে মাথায় একটা চমৎকার আইডিয়া এল। অনেকদিন ধরে ব্লগে পোস্ট দেই না, এই সুযোগে একটা নতুন গল্প লিখে ফেলা যায়। সময়টাও সুন্দর কেটে যাবে।তাছাড়া কাল থেকে ছুটি শুরু, এই সুযোগে পুরানো ব্লগারদের সাথে ইন্টারেকশানটাও ঝালিয়ে নেয়া যাবে।
গল্পটা মাথার ভেতর সাজিয়ে নিতে শুরু করলাম। একটা ছেলে তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে, কিন্তু মাঝপথে ট্রাফিক সার্জেন্ট এম্বুলেন্স আটকে দেবে। কারণ এই পথ দিয়েই একটু পর ভিআইপি যাবে।
সাধারণ গল্প, তবে বাবার প্রতি ছেলের ভালবাসা আর তার অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারলে পাঠক ভালই খাবে।
গল্পটা টাইপ করতে শুরু করলাম।
মনে হয়ে পাঁচ মিনিট চলে গেল, কিংবা তারও কম। খেয়ালই করিনি গাড়িগুলো কখন চলতে শুরু করেছে।আমার বেকুব ড্রাইভারটা এখনো স্টিয়ারিং চেপে ধরে চুপচাপ বসে আছে।
-কি হল? গাড়ি টানেন না কেন?
-স্যার, এম্বুলেন্সটাকে একটু সাইড দিচ্ছি। ওটা পার হয়ে গেলেই আমি টান দিব।
-আরে ওটা পার হতে হতেতো আমরা আবার সিগন্যালে পড়ে যাব।
-কিন্তু স্যার, এম্বুলেন্সটা সাইরেন বাজাচ্ছে। ভিতরে রোগীর অবস্থা হয়ত সিরিয়াস।
-রাখেন আপনার সিরিয়াস। টান দেন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ড্রাইভার টান দেয়।তার চোখে আমি বোবা ক্রোধ দেখতে পাই। যত্তসব।
কি যেন করছিলাম? ও হ্যা, গল্পটা শেষ করা জরুরী...
গল্পঃ ভন্ড
১৫.০৭.১৮
অনেকক্ষণ ধরে জ্যামে বসে আছি, রিকশাটা কোনভাবে এগুচ্ছেই না।তাও ভাল বিকালবেলা, রোদের তেজটা কম। নাহলে এই গরমে কি করতাম, কে যানে।
-ভাই, কেমন আছেন? ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা একটা ছেলে আমার দিকে হাত নাড়ে।
-ঠিক চিনতে পারলাম না।
ছেলেটা আহত চোখে আমার দিকে তাকায়। -কি বলেন ভাই? আমি নাদিম, স্কুলে আপনার এক ব্যাচ জুনিয়র ছিলাম।
স্কুলে নাদিম বলে কোন জুনিয়র কি ছিল? ঠিক মনে পড়ে না।
-কি ভাই, এখনো চিনতে পারেন নাই?
মুখের উপর না বলি কিভাবে? -কি যে বল, চিনতে পারব না কেন? তা কেমন আছ?
-এইতো ভাই। পাশেই আমার রেস্টুরেন্ট, একটু আসেন, গল্পগুজব করি।
-আজকে না ভাই, আরেকদিন।
-সামনে এক্সিডেন্ট হইছে, এই জ্যাম সহজে ছাড়বে না। তারচেয়ে আমার রেস্টুরেন্টে আসেন, সময়টা ভাল কাটবে।
ছেলেটা মনে হয় ঠিকই বলেছে। আমি ভাড়া দিয়ে রিকশা থেমে নেমে পড়ি।
-কোথায় তোমার রেস্টুরেন্ট?
-এইতো, সামনেই।
-চল আগাই।
হাটতে হাটতে কখন রাস্তার শেষ মাথায় চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। -কি মিয়া, তোমার রেস্টুরেন্ট কোথায়?
ছেলেটা পকেট থেকে চকচকে একটা জিনিস বের করে, একবার তাকাতেই বুক শুকিয়ে যায়।
চাকু!!!
-যা কিছু আছে সব চুপচাপ দিয়ে দে, নাহয় এক পোচে শেষ কইরা দিমু...
গল্পঃ চেনা মানুষ
১৫.০৭.১৮
===============================================================
সিরিজের আগের পর্বসমূহঃ
পরমাণু গল্পসমগ্র-১
পরমাণু গল্পসমগ্র-২
পরমাণু গল্পসমগ্র-৩
পরমাণু গল্পসমগ্র-৪
পরমাণু গল্পসমগ্র-৫
পরমাণু গল্পসমগ্র-৬
পরমাণু গল্পসমগ্র-৭
পরমাণু গল্পসমগ্র-৮
পরমাণু গল্পসমগ্র-৯
পরমাণু গল্পসমগ্র-১০
পরমাণু গল্পসমগ্র-১১
পরমাণু গল্পসমগ্র-১২
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৬