somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০২১ : হস্তিনাপুরে পঞ্চপাণ্ডবের আগমন ও ভীমের নাগলােক দর্শন

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যুর পরে পাণ্ডুর আশ্রমের কাছেই যে ঋষিরা বাস করতেন তারা পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃতদেহ এবং কুন্তী ও পাঁচ রাজপুত্রদের হস্তিনাপুরে পৌছে দিলেন। তখন পঞ্চপাণ্ডব যুধিষ্ঠিরের বয়স ছিল ষােল, ভীমের পনের, অর্জনের চৌদ্দ এবং নকুল-সহদেবের তের বছর।

ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে বিদুর পাণ্ডু ও মাদ্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করলেন। তখন ব্যাস তাঁর মা সত্যবতীকে জানালেন সুখের দিন শেষ হয়েছে, পৃথিবী এখন গতযৌবনা, ক্রমশ পাপ বৃদ্ধি পাবে, কৌরবদের দূনীতির ফলে ধর্মকর্ম লােপ পাবে। ব্যাস তাঁর মা সত্যবতী এবং দুই ভাতৃবধূ অবিকা ও অম্বালিকাকে সঙ্গে নিয়ে বনে গিয়ে ঘাের তপস্যা করতে রইলেন। সেখানেই সত্যবতী এবং অবিকা ও অম্বালিকা শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন।

পঞ্চপাণ্ডব হস্তিনাপুরে তাদের পিতৃগৃহে সুখে বাস করতে লাগলো। তবে সবার মধ্যে ভীম ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। সে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের সাথে খেলার ছলে নানান ভাবে তাঁদের নিগ্রহ করত। সকল খেলাধুলা ও প্রতিযোগীতায় ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা ভীমে কাছে হেরে গিয়ে ভীম তাঁদের কাছে অপ্রিয় হয়ে পরলো।




দুর্যোধন গঙ্গাতীরে উদকক্রীন নামের একটি বিহারগৃহ (বাগান বাড়ি) তৈরি করে সেখানে পঞ্চপাণ্ডবকে নিমন্ত্রণ করলো। পঞ্চপাণ্ডব নিমন্ত্রণে উপস্থিথ হলে দুর্যোধন কালকূট নামের ভয়ানক বিষ খাবারে মিশিয়ে ভীমকে খায়িয়ে দিল। তাপর সকলে গঙ্গার জলে স্নান শেষে বিহারগৃহে বিশ্রাম করতে গেল। কিন্তু তার আগে ভীম বিষের প্রভাবে অচেতন হয়ে গঙ্গাতীরে পড়ে রইলেন। দুর্যোধন ভীমকে লতা দিয়ে বেধে গঙ্গার জলে ফেলে দিল।



সংজ্ঞাহীন ভীম জলর নিচে নাগলােকে পৌছালে মহাবিষধর সপেরা তাঁকে দংশন করতে লাগল। সাপেদের বিষে কালকূট বিষ নষ্ট হয়ে গেল এবং ভীম জ্ঞান ফিরে পেয়ে তাঁর বাধন ছিড়ে সপদের মারতে শুরু করলো। নাগরাজ বাসুকী বিষয়টি জানতে পেরে ভীমের কাছে গিয়ে তাঁকে নিজের দৌহিত্রের দৌহিত্র বলে চিনতে পেরে গাঢ় আলিঙ্গন করলেন। বাসুকি ভীমকে আপ্যায়নের জন্য রাসায়ণকুণ্ডের রসায়ন পান করতে দিলেন। ভীম এক-এক চুমুকে একটি করে মোট আটটি রসায়নকুণ্ড পান করে নিয়ে এক ঘুম দিলেন।

অন্যদিকে জলবিহার শেষ করে প্রাসাদে ফেরার সময় অন্যেরা ভীমকে খুঁজে পেলো না। তখন সকলে ভাবলো ভীম আগেই চলে গেছে। কিন্তু সকলে হস্তিনাপুরে ফিরে দেখলো ভীম সেখানে ফিরে আসে নি। সকলে চিন্তিতো হয়ে চারদিকে খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু ভীমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না।

অন্যদিকে রসায়ন পান করে ভীম যে ঘুম দিয়েছে সেই ঘুম ভাঙ্গলো অষ্টম দিনে। তখন বাসুকী ভীমকে জানালো রাসায়ন পান করে ভীম হাজার হাতীর সমান শক্তীশালী হয়ে উঠেছে। নাগগনের আর্শীবাদ নিয়ে ভীম এবার নাগলোক ছেড়ে নিগ গৃহে ফিরে গেলেন এবং বড় ভাই যুধিষ্ঠিরকে সব কিছু খুলে বললেন। সব শুনে যুধিষ্ঠির ভীমকে এই সব কথা গোপন রাখতে বললেন এবং তারপর থেকে সবাই খুব সতর্ক থাকলেন।


====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:১৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×