somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০১৯ : গান্ধারী, কুন্তী ও মাদ্রীর কাহিনী

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভীষ্ম নিজ ছেলের মতো করে ধৃতরাষ্ট, পাণ্ডু ও বিদুরকে লালন পালন করলেন। ধৃতরাষ্ট্র অসাধারণ বলবন, পাণ্ডু তুখর তীরন্দাজ, এবং বিদুর প্রচন্ড ধর্ম পরায়ণ হল। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ, বিদুর দাসীর গর্ভজাত, একারণে পাণ্ডুই রাজ হল।



ভীষ্ম গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সঙ্গে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দিলেন। অন্ধ স্বামীর পতি সম্মান দেখাতে পতিব্রতা গান্ধারী এক খণ্ড কাপড় ভাজ করে চোখের উপর বাঁধে নিলো।


বসুদেবের পিতা শূরের পৃথা (পৃথা বা কুন্তী কৃষ্ণের পিসী) নামে একটি মেয়ে ছিল। শূর তাঁর ফুপাত ভাই নিঃসন্তান কুন্তিভােজকে সেই মেয়েটি দিয়ে দেন। পালক পিতার নাম অনুসারে পৃথার অপর নাম হয় কুন্তী

একদা ঋষি দূর্বাসা কুন্তীর বাড়িতে বেরাতে এলে কুন্তীর আপ্যায়নে সন্তুষ্ট হয়ে কুন্তীকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দেন। সেই মন্ত্র পাঠ করে যেকোনে দেবতাকে ডাকলে তাঁর সাথে মিলনে কুন্তী পুত্রলাভ করতে পারবে।



কৌতুহলবশে কুন্তী সূর্য দেবতাকে মন্ত্র পড়ে ডাকলো। ততক্ষণাত সূর্যদেব আবির্ভূত হয়ে বললেন তাঁর সাথে মিলনের ফলে কুন্তী পুত্র লাভ করবে এবং কুমারীই থাকবে। সূর্য দেবতা সঙ্গে মিলনে কবচ (বর্ম) ও কুণ্ডল সহ কুন্তীর একটি পুত্র জন্ম নিলো। (এই ছেলেটিই পরে কর্ণ নামে পরিচিত হয়।)



কুমারী মাতা কুন্তী কলঙ্কের ভয়ে তাঁর সদ্যজাত পুত্রকে একটি পাত্রে রেখে জলে ভাসিয়ে দিল। শূতবংশীয় অধিরথ ও তাঁর পত্নী রাধা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসুষেণ নাম দিয়ে নিজের ছেলের মত পালন করলেন। বসুষেণ বড় হয়ে সকল প্রকার অস্ত্রচালনা শিখলো। সে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের উপাসনা করতো। একদিন ব্রাহ্মণবেসে ইন্দ্র এসে বসুষেণের কাছে তাঁর কবচ চাইলো। বসুষেণ নিজের দেহ থেকে কবচটি কেটে দিয়ে দিলো। ইন্দ্র খুশী হয়ে তাঁকে শক্তি অস্ত্র দান করলেন। এই অস্ত্র যার উপরে নিক্ষেপ করা হবে সে অবশ্যই মারা যাবে। কিন্তু একজন নিহত হলেই অস্ত্রটি আবার ইন্দ্রের কাছে ফিরে যাবে।
কবচ কেটে দেওয়ার জন্য বসুষেণের নাম কর্ণ ও বৈকর্তন হয়।



রাজা কুন্তিভােজ তাঁর পালিতা কন্যা কুন্তীর বিবাহের জন্য স্বয়ংবরসভার আয়োজন করলেন। সেখানে কুন্তী রাজা পাণ্ডুর গলায় বরমালা পরালেন।

ভীষ্ম পাণ্ডুর আর একটি বিবাহ দিতে চাইলেন। তিনি মদ্রদেশের রাজা শল্যেকে বহু ধন-রত্ন দান করে তাঁর বোন মাদ্রীকে হস্তিনাপুরে এনে পাণ্ডুর সঙ্গে বিবাহ দিলেন।

অন্যদিকে দেবক রাজার শূদ্রা পত্নীর গর্ভে এক ব্রাহ্মণের ঔরসে একটি কন্যার জন্ম হয়েছিল। সেই কন্যার সঙ্গে বিদুরের বিবাহ হল।


মহারাজ পাণ্ডু নানা দেশ জয় করে বহু-রত্ন নিয়ে স্বরাজ্যে ফিরে সেই সমস্ত ধন-রত্ন ভীষ্ম, দুই মা ও বিদুরকে উপহার দিলেন। তারপর তিনি তার দুই পত্নী কুন্তী ও মাদ্রীকে সঙ্গে নিয়ে বনবিহারে গেলেন। কিছুদিন পরে কুন্তীর গর্ভে যুধিষ্ঠির জন্ম হলো। (যুধিষ্ঠিরের জন্ম রহস্য আগামী পর্বে জানা যাবে।)



অন্যদিকে ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারীও গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু দু্ বছর পার হয়ে গেলেও তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছিলো না। কুন্তীর গর্ভে যুধিষ্ঠির জন্মের কথা জানতে পেরে গান্ধারী ঈর্ষান্বিত হয়ে পরলেন। অধির হয়ে শেষে গান্ধারী নিজের গর্ভপাত করলেন। তখন দেখতে পেলেন তার গর্ভে লোহার মতো শক্ত একখণ্ড মাংসপিণ্ড ছিলো। তিনি সেই মাংসপিণ্ডটি ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় দ্বৈপায়ন ব্যাস এসে জানালেন তার আর্শীবাদে ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারীর একশোটি পুত্র জন্ম নিবে(গান্ধারীর সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে দ্বৈপায়ন ব্যাস গান্ধারীকেও একশত পুত্রের বর দিয়েছিলেন।) দ্বৈপায়ন ব্যাস সেই মাংসপিণ্ডটিকে শীতল জলে ভিজিয়ে রাখতে বললেন। দ্বৈপায়ন ব্যাসের কথা মতো গান্ধারী মাংসপিণ্ডটিকে শীতল জলে ভিজালে সেখান থেকে বুড়ো আঙুলের মতো একশোটি ভ্রুণ শিশু আলাদা হয়ে এলো। এবার গান্ধারী সেই ভ্রুণ শিশু গুলিকে একটি একটি করে একশোতটি ঘীয়ে ভরা কলসে রেখে দিলো। ঠিক এক বছর পরে একটি কলসে দুর্যোধন জন্মগ্রহণ করলো। কুন্তীর গর্ভে সেদিনই ভীম জন্মগ্রহণ করলো।



দুর্যোধন জন্মেই গর্দভের মত কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো, সঙ্গে সঙ্গে শকুন-শিয়াল-কাকেরাও ডাকতে লাগল। আরো অন্যান্য অশুভ লক্ষণ দেখা গেল। ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম ও বিদুর এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণদের ডেকে জানালেন বংশের বড় রাজপুত্র যুধিষ্ঠির এর পরে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্যোধন রাজা হবে। কিন্তু ঠিক তখনই হিংস্র জন্তুরা আবার ডেকে উঠল। তাই শুনে বিদুর ও অন্যান্য ব্রাহ্মণেরা জানালো দুর্যোধন বংশ নাশ করবে। দুর্যোধনকে পরিত্যাগ করাই মঙ্গল। কিন্তু পুত্রস্নেহে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে পরিত্যাগ করলেন না। এক মাসের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধন, দুঃশাসন দুঃসহ ইত্যাদি একশত পুত্র এবং দুঃশলা নামে একটি কন্যার জন্ম হল। গান্ধারী যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন এক বৈশ্যা (ব্যবসায়ী সম্প্রদায়) ধৃতরাষ্ট্রের সেবা করত। তাঁর গর্ভে একটি ছেলে জন্মে তার নাম যুযুৎসু



====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।

=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×