বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সূরা নাহল কুরআনের ১৬ তম সূরা।
এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৮টি। অনলাইনে সূরা নাহল পড়তে চাইলে সূরা নাহ্লকে বিশেষ কোন ভূমিকা ছাড়াই কঠোর শাস্তির সতর্কবাণী ও ভয়াবহ বিষয়বস্তু দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এই সুরার ৬৮-৬৯ নম্বর আয়াতে মৌমাছি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। রয়েছে মধুর উপকারিতার কথা। তাই নাহল বা মৌমাছি নামে এর নামকরণ হয়েছে। এ সুরায় মানুষের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য নিয়ামতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরার কেন্দ্রীয় আলোচনা শিরক, তাওহিদ ও নবীদের দাওয়াত ঘিরে। সুরাটির শেষ রুকুতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে।
আল্লাহ-তায়ালা ধর্মীয় নেতাদেরকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। সুরা নাহলের ৪৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ প্রশ্ন করছেন: 'তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুগুলোকে দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সিজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে?' সুরা নাহলের ৬৫ নম্বর আয়াত থেকে পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে মহান আল্লাহর নানা নেয়ামতের কথা এসেছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং এর মাধ্যমে মৃত জমিনকে দান করেন জীবন। সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে: 'আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।'
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এক সাহাবি তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবি বললেন- অসুখ বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এল যে, অসুখের কোনো পার্থক্য হয়নি, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। উদ্দেশ্য এই যে, ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে ওষুধ দ্রুত কাজ করেনি। এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে উঠে।
সূরা নাহলের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানুষকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব তোমরা যদি না জানো তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর। আমি ( আপনার পূর্বের) পয়গম্বরদেরকে স্পষ্ট নিদর্শন ও ঐশী গ্রন্থসহ প্রেরণ করেছি, আপনার কাছে আমি ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।'
শত্রুরা রাসূল (সা.)- এর ওপর যে সব অপবাদ দিত তার একটি ছিলঃ রাসূল (সা.)-এর একজন শিক্ষক আছেন, যিনি তাঁকে আয়াত শিক্ষা দিতেন এবং রাসূল (সা.) ওই আয়াত আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রচার করতেন। সে আলোচনার ধারাবাহিকতায় আল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি কাফের সে পথভ্রষ্ট, তার পক্ষে সঠিক পথের দিশা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তার কাছ থেকে হেদায়েতের বার্তা বিশ্বনবীর কাছে যেতে পারে না। কারণ, পবিত্র কুরআন হচ্ছে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা এবং মানুষ এটি অনুসরণ করে মহাসাফল্য অর্জন করতে পারে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজে এই মহাসাফল্য অর্জনের সুযোগ পায়নি সে কিভাবে রাসূল (সা.)-এর শিক্ষক হবে?
গ্রন্থপঞ্জী
পবিত্র কুরআনুল কারিম
তাফসিরে তাবারী
তাফসিরে ইবনে কাছির
তাফসিরে মা’রেফুল কুরআন
তাফসির ফি যিলালিল কুরআন
তাফসিরে রাহমানী
সহিহ আল বোখারী
সহিহ আল মুসলিম
ফাতহুল কাদির
এ’লামুল মুওয়াক্কেঈ’ন
মু’জামুল ওয়াসিত অভিধান
উইকিপিডিয়া
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
৯। সূরা আত-তাওবা
১০। সূরা ইউনুস
১১। সূরা হুদ
১২। সূরা ইউসুফ
১৩। সূরা রাদ
১৪। সূরা ইবরাহীম
১৫। সূরা হিজর