মহর্ষি গৌতমের শরদ্বান নামে এক শিষ্য ছিল, তিনি তুখর তীর-ধনুক চালাতে পারতেন। তবে বেদাধ্যয়নে তেমন মন ছিল না। তাঁর তপস্যায় ভয় পেয়ে ইন্দ্র জানপদী অপ্সরাকে পাঠালেন। অপ্সরা জানপদীর নগ্নরূপ দেখে শরদ্বানের হাত থেকে তীর-ধনুক পড়ে গেল এবং বীর্যপাত হল। সেই বীর্য তীরের ফলায় পড়ে দুই ভাগ হল এবং তা থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করল। রাজা শান্তনু, তাদের দেখতে পেয়ে প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে নিজের সন্তানের মত করে পালন করলেন। ছেলেটির নাম কৃপ ও মেয়েটির নাম কৃপী রাখলেন। শরদ্বান তপােবলে তাদের কথা জানতে পেরে রাজপ্রাসাদে এসে কৃপকে তীর-ধনুক চালানোর শিক্ষা দিয়ে পারদশী করে দিলেন। যুধিষ্ঠির, দুর্যোধন সহ সকলে এবং অন্যান্য দেশের রাজপুত্ররা এই কৃপাচার্যের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিখতে লাগলো।
গঙ্গোত্তরীতে ভরদ্বাজ নামের একজন ঋষি বাস করতেন। একদিন স্নানরত ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে তাঁর শুক্রপাত হয়ে যায়। সেই শুক্র তিনি কলসের মধ্যে রাখে দিলে তা থেকে দ্রোণ জন্মগ্রহণ করে।
পাঞ্চালরাজ পৃযত ভরদ্বাজের বন্ধু ছিলেন। তাঁর ছেলে দ্রুপদ দ্রোণের সঙ্গে খেলা করতো। পাঞ্চালরাজপুত্র দ্রুপদ আর দ্রোণ ছোটো বেলায় অগ্নিবেশ্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলো। তারা দুজন বন্ধু ছিলো। অস্ত্রশিক্ষা শেষ হলে চলে যাবার সময় দ্রুপদ দ্রোণকে বলেছিল সে যখন রাজা হবে তখনো তাদের বন্ধুত্ব থাকবে।
বড় হয়ে পিতার আদেশে দ্রোণ কৃপীকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছেলে হয়, ছেলেটি ভূমিষ্ঠ হয়েই অশ্বের মতো চিৎকার করেছিল বলে তাঁর নাম অশ্বথামা রাখা হয়।
ভরদ্বাজের মত্যুর পর দ্রোণ বাবার আশ্রমেই থেকে যায়। একদিন তিনি শুনলেন ভৃগুনন্দন পরশুরাম তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ ব্রাহ্মণদের দান করছেন। দ্রোণ পরশুরামের কাছে গিয়ে প্রণাম করে ধন-সম্পদ চাইলেন। কিন্তু ততোক্ষণে পরশুরাম তার সমস্ত ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন, শুধু মাত্র তার অস্ত্রশস্ত্র অবশিষ্ট ছিল। দ্রোণ সেই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র চাইলো এবং সেগুলি কি করে ব্যবহার করতে হয় তাও পরশুরামের কাছ থেকে শিখে নিলো।
একদিন বালক অশ্বত্থামা অন্য ছেলেদের দুধ খেতে দেখে বাবার কাছে দুধ চেয়ে কাঁদতে লাগল। কিন্তু দরিদ্র দ্রোণ বহু চেষ্টা করেও গাভীর দুধ জোগাড় করতে পালেন না। শেষে দরিদ্র দ্রোণ তার বাল্যবন্ধু পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের রাজ্যে গিয়ে হাজির হলেন। কিন্তু রাজা হওয়ার পরে দ্রুপদ বদলে গেছে। সে দ্রোণকে বন্ধু বলে পরিচয় দিলো না, বরং অপমান করে তারিয়ে দিলো। অপমানিতো হয়ে মনের দুঃখে দ্রোণ সেখান থেকে হস্তিনাপুরে গিয়ে নিজের পরিচয় গােপন রেখে বাস করতে লাগলেন।
একদিন রাজকুমাররা নগরের বাইরে এসে ডাংগুলি / গুলিডাণ্ডা খেলছিলো। হঠাত তাঁদের ডাংগুলিটি কূপের মধ্যে পড়ে গেল। তাঁরা অনেক চেষ্টা করেও সেটি তুলতে পারল না। দ্রোণ তখন সেখানেই বসা ছিলো। রাজকুমারদের ডাংগুলিটি তুলতে ব্যর্থ হতে দেখে দ্রোণ তাদের ভৎসনা করলেন এবং কাশ ফুলের গাছ দিয়ে এক বিচিত্র উপায়ে তিনি ডাংগুলিটি তুলে দিলেন।
রাজকুমাররা প্রাসাদে ফিরে গিয়ে সব কথা জানালো ভীষ্মকে। ভীষ্ম বুঝলেই ইনিই দ্রোণ, তাই তিনি সাথে সাথে দ্রোণকে প্রাসাদে এনে রাজকুমারদের অস্ত্রগুরু হিসেবে নিয়োগ দিলেন এবং দ্রোণের জন্য একটি চমৎকার বাসভবনের ব্যবস্থা করে দিলেন।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩