somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০২৭ : ঘটোৎকচের জন্ম কথা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কুন্তী ও যুধিষ্ঠিররা যেখানে ঘুমাচ্ছিলেন তার কাছেই একটি শালগাছের উপর ভয়ংকর আকারের হিড়িম্ব নামে এক রাক্ষস ছিল। পাণ্ডবদের দেখে এই রাক্ষসের মনুষের মাংস খাবার ইচ্ছা হল, সে তার বোন হিড়িম্বাকে বললো মানুষ গুলিকে ধরি নিয়ে আসতে।



ভাইয়ের কথা শুনে হিড়িম্বা পাণ্ডবদের কাছে এসে দেখলো একজন ছাড়া সকলেই ঘুমাচ্ছে। ভীমকে দেখে হিড়িম্বার খুর পছন্দ হয়ে গেলো। ভীমকে সে তার স্বামী হবার যােগ্য মনে করলো। ভ্রাতৃস্নেহের চেয়ে পতিপ্রেমই বড়। হিড়িম্বা তখন সুন্দরী রূপসী সালংকারা নারীর রূপ ধারণ করে ভীমকে বললো- আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন? এই ঘুমন্ত দেবতুল্য পুরুষরা এবং এই রমণী এরা কারা? এই বনে আমার রাক্ষস ভাই হিড়িম্ব থাকে, সে আপনাদের মাংস খেতে চায়। আপনাকে দেখে আমি মােহিত হয়েছি, আপনি আমার স্বামী হন। আমি আকাশচারিণী, আপনাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে থেকে পালিয়ে যেতে পারবো।
ভীম বললেন- ঘুমন্ত এরা আমার ভাই ও মা। এদের রাক্ষসের কবলে ফেলে আমি পালাবো না।
হিড়িম্বা বললো- এদের জাগান, আমি সকলকে রক্ষা করবো।
ভীম বলেন- এরা সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, আমি এখন জাগাতে পারব না। রাক্ষস বা গন্ধর্ব সকলকেই আমি পরাস্ত করতে পারি। তুমি যাও বা থাকো বা তােমার ভাইকে এখানে পাঠিয়ে দাও।



হিড়িম্বার ফিরতে দেড়ি হচ্ছে দেখে হিড়িম্ব দ্রুত পাণ্ডবদের কাছে আসলো। হিড়িম্ব এসে দেখলে, তার বোন সুন্দরী নারীর রূপ ধরে ভীমের সঙ্গে কথা বলছে। সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বোনকে গালি-গালাজ করতে লাগলো। তখন ভীম রাক্ষসকে বললো তােমার বোনের দোষ নেই, শরীরের ভিতরে যে কামদেব আছেন তাঁর কারণে ও আমার প্রতি আসক্ত হয়েছে। তারপর ভীম আর হিড়িম্বের মধ্যে বাহুযুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধের শব্দে সকলেই জেগে উঠলেন। শেষে ভীম রাক্ষসকে তুলে ধরে ঘোরাতে লাগলেন এবং তারপর মাটিতে ফেলে নিষ্পিষ্ট করে হত্যা করলেন।







হিড়িম্বা কুন্তীকে নিজের পরিচয় দিয়ে জানালো যে সে ভীমকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু ভীম তখন হিড়িম্বাকে হত্যঅ করতে উদ্ধত হলে, তখন যুধিষ্ঠির ভীমকে থামালেন। হিড়িম্বা কুন্তীর কাছে কাকুতি করে বললো যে সে তার স্বজনদের ছেড়ে এসেছে ভীমকে প্রতি রূপে বরন করতে বলে। ভীম প্রত্যাখ্যান করলে সে বাঁচবে না। ভীমের সাথে মিলিতো করে দিলে সে ভীমকে নিয়ে ইচ্ছামতো বিচরণ করা শেষে আবার তাকে এখানে ফিরিয়ে দিবে। এবং পরবর্তীতে কোনো দরকার পরলে তাকে মনে মনে ভাবলেই সে উপস্থিত হবে।



যুধিষ্ঠির বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের মিলনে মত দিলেন। তবে শর্ত হচ্ছে ভীম স্নান আহ্নিক করে হিড়িম্বা সঙ্গে মিলিত হবেন এবং সূর্যাস্ত হলেই ভাইদের কাছে ফিরে আসবেন। ভীম হিড়িম্বাকে বললেন, যত দিন হিড়িম্বার পুত্র না হয় ততো দিন ভীম হিড়িম্বার সঙ্গে থাকবেন! হিড়িম্বা সম্মত হয়ে ভীমকে নিয়ে আকাশপথে চলে গেল।

কিছুকাল পরে হিড়িম্বার একটি ভীষণাকার বলবান পুত্র হল। রাক্ষসীরা গর্ভবতী হয়েই সাথে সাথে প্রসব করে। হিড়িম্বার পুত্র জন্মাবার পরেই যৌবনলাভ করে সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়ােগে দক্ষ হল। তার মাথা ঘটের মত এবং চুল খাড়া সেজন্য হিড়িম্বা পুত্রের নাম রাখলে ঘটোৎকচ



কুন্তী ও পাণ্ডবদের প্রণাম করে ঘটোৎকচ বললো- আমাকে কি করতে হবে আজ্ঞা করুন।
কুন্তী বললেন- তুমি কুরকুলে জন্মেছো, তুমি সাক্ষাৎ ভীমের তুল্য এবং পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তুমি আমাদের সাহায্য করাে। ঘটোৎকচ বললো- প্রয়ােজনে আমাকে মনে করলেই আমি উপস্থিত হব। এই বলে সে উত্তর দিকে চলে গেল।



পাণ্ডবরা তপস্বীর ছদ্মবেশে নানান দেশের ভিতর দিয়ে চললেন। যেতে যেতে পিতামহ ব্যাসের সঙ্গে তাঁদের দেখা হল। ব্যাস বললেন, আমি তােমাদের সমস্ত খবরই জানি। যত দিন আমার সঙ্গে আবার দেখা না হয় তত দিন তােমরা নিকটস্থ ঐ নগরে ছদ্মবেশে বাস কর। এই বলে ব্যাস পাণ্ডবদের একচক্রা নগরে এক ব্রাহ্মণের ঘরে রেখে এলেন।





====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১, মহাভারতের গপ্পো - ০২২, মহাভারতের গপ্পো - ০২৩, মহাভারতের গপ্পো - ০২৪
মহাভারতের গপ্পো - ০২৫, মহাভারতের গপ্পো - ০২৬
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×