somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০২৩ : একলব্যের কাহিনী

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্রোণের কাছে পঞ্চপাণ্ডব আর দুষমন্তরাজপুত্রগণ অস্ত্রশিক্ষা নিতে লাগলেন। সেই সাথে অন্যান্য দেশের রাজপুত্রগণও তাঁর কাছে অস্ত্র শিক্ষার জন্য এলেন। সুতপুত্র কর্ণও তার কাছে অস্ত্র শিক্ষা নিতেন। সকলের মধ্যে অর্জুন ছিলেন দ্রোণের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র।



নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য দ্রোণের কাছে অস্ত্র শিক্ষার জন্য এলেন, কিন্তু নীচজাতি বলে দ্রোণ তাঁকে নিলেন না। একলব্য দ্রোণের পায়ে মাথা রেখে প্রণাম করে বনে চলে গেলেন এবং দ্রোণের একটি মাটির তৈরী মূর্তিকে সামনে রেখে নিজের চেষ্টায় অস্ত্রবিদ্যা অভ্যাস করতে লাগলেন।



একদিন রাজকুমাররা বনে গেলো হরিণ শিকার করতে। তখন তাদের একটি কুকুর ঘুরতে ঘুরতে একলব্যের কাছে চলে গেলো। একলব্যের জটাধারী শরীর দেখে চিৎকার করতে লাগল। একলব্য একসঙ্গে সাতটি তীর কুকুরটির মুখের মধ্যে পুরে দিলেন। কুকুরটি তাই নিয়ে রাজকুমারদের কাছে ফিরে গেল। তাই দেখে রাজকুমাররা বিস্মিত হয়ে রাজধানীতে ফিরে দ্রোণাচার্যকে একলব্যেরকথা জানাল।



দ্রোণাচার্য অর্জুনকে বলেছিলেন তার শিষ্যদের মধ্যে অর্জুনই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। এবার অর্জুন দ্রোণাচার্যকে গিয়ে বললো একলব্য কি করে অর্জুনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠলো? তাই শুনে দ্রোণাচার্য অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে একলব্যের কাছে গেলেন, একলব্য ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলো।
দ্রোণ বললেন - তুমি যদি আমার শিষ্যই হও তবে গুরুদক্ষিণা দাও।
একলব্য বললেন - কি দেব আজ্ঞা করুন, গুরুকে অদেয় আমার কিছুই নেই।
দ্রোণ বললেন - তােমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আমাকে দাও।



এই কথা শোনার সাথে সাথে একলব্য হাসি মুখে তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে গুরুকে দিয়ে দিলেন। অঙ্গুষ্ঠ ছেদন ক'রে দ্রোণকে দিলেন। তারপর একলব্য আবার তার বিনা বৃদ্ধাঙ্গুলিতে তীর চালনা করলেন। দেখা গেলো তার আর আগের মতো দ্রুতগতীতে নির্দিষ্ট যায়গায় লখ্যভেদ করতে পারছে না। তাই দেখে অর্জন সন্তুষ্ট হয়ে গুরুর সাথে ফিরে গেল।

দ্রোণের শিক্ষার ফলে ভীম ও দুর্যোধন গদাযুদ্ধে, অশ্বত্থামা গুপ্ত অস্ত্রে, নকুল-সহদেব অসিযুদ্ধে, যুধিষ্ঠির রথচালনায়, এবং অর্জুন বুদ্ধি বল উৎসাহ ও সর্বাস্ত্রের প্রয়ােগে শ্রেষ্ঠ হলেন।



একদিন দ্রোণাচার্য একটি কৃত্রিম বাজ পাখি গাছের উপর রেখে রাজকুমারদের বললেন, তােমরা ঐ পাখিটিকে লক্ষ্য করে স্থির হয়ে থাক, যাকে বলব সে তির ছুড়ে পাখিটির মুণ্ডচ্ছেদ করবে। সকলেই পাখিটির দিকে লক্ষ্য স্থির করলো। এবার দ্রোণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি গাছের উপর ঐ পাখিটি দেখছ? ঐ গাছ, আমাকে আর তােমার ভাইদের দেখছ? যুধিষ্ঠির বললেন তিনি সবই দেখতে পাচ্ছেন। দ্রোণ বিরক্ত হয়ে বললেন, সরে যাও, তুমি এই লক্ষ্য বেধ করতে পারবে না। দুর্যোধন, ভীম সহ সকলেই বললেন, আমরা সবই দেখছি। দ্রোণ তাঁদেরও সরিয়ে দিলেন। তারপর অর্জুনকে একই প্রশ্ন করলেন। অর্জুন বললেন, আমি কেবল পাখিটি দেখছি। দ্রোণ বললেন, আবার বলো। অর্জুন বললেন, কেবল পাখির মাথাটি দেখছি। খুশী হয়ে দ্রোণ বললেন, এইবার তির নিক্ষেপ করো। তৎক্ষণাৎ অর্জুন তির নিক্ষেপ করলেন এবং পাখিটির মাথা মাটিতে পরে গেলো।



একদিন শিষ্যদের নিয়ে দ্রোণাচার্য গঙ্গায় স্নান করতে নামলেন। একটা কুমির তখন দ্রোণাচার্যের পায়ে কামড়ে ধরল। দ্রোণ চিৎকার করে উঠলেন। তখন অর্জুন এক সাথে পাঁচটি তির (শর) নিক্ষেপ করে কুমিরটিকে হত্যা করে গুরুকে বাঁচালো। অন্য শিষ্যরা তখন মোহাচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। দ্রোণাচার্য খুশী হয়ে অর্জুনকে ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র দান করলেন। তিনি অর্জুনকে বলে দিলেন এই অস্ত্র শুধু আক্রমণ করতে আশা শত্রুর উপর প্রয়োগ করতে পারবে।




====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১, মহাভারতের গপ্পো - ০২২

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×