somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

৩০ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিস্তি-১৭

বাড়ি সবাই আজ ভীষণ ব্যস্ত। রাবেয়া খাতুন ব্যস্ত আছেন রান্না নিয়ে। নানা রকম সুস্বাদু খাবার তৈরি করছেন তিনি। আজ ভোরে পারভেজ দেশে আসছে। একমাত্র মেয়ের জামাই। তার ওপর ইতালি থাকে। ভাল রোজগার করে। নিশ্চয়ই নিপুণের জন্য এবার একটা ব্যবস্থা করে আসবে। এমন জামাইয়ের জন্য বাড়তি কিছু না করলে কি চলে? আরও কত শত চিন্তা মাথায় কিলবিল করে রাবেয়া খাতুনের।
জামাই নিয়ে কোন উত্তেজনা নেই জাফর সাহেবের। বরং তাকে কিছুটা চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে। দু’দিন ধরে অফিসে যাচ্ছেন না। শরীর খারাপ। সুগার বেড়ে ১৩ পয়েন্ট ৭-এ দাঁড়িয়েছে। প্রেসারটাও বিগড়ে আছে। ঘুম হচ্ছে না। খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি।
সকাল সাতটায় জিয়ায় বিমান ল্যান্ড করার কথা। সামি, নিপুণ তৈরি। তারা বেশ উৎফুল্ল। অহনা সাজগোজ করছে। তাকে বার বার তাড়া দিচ্ছে সামি। আপা হইছে, আপা হইছে। পাঁচ মিনিট পর পরই অহনার রুমের দরজায় এসে নক করছে। অহনার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনে হলো কপালের টিপটা ঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। ওটাকে চার-পাঁচবার লাগানোর পরও মনে হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না। কপালের ঠিক মাঝখানটায় বসাতে পারছে না। এ নিয়ে খুব বিরক্ত সে।
লিপস্টিক লাগাতে সময় লেগেছে ৩৩ মিনিট। মেরুন শাড়ির সঙ্গে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে নিজের ওপর বিরক্ত হলো অহনা। কি কাণ্ড। তার মাথা কি ঠিকমতো কাজ করছে না? তাই যদি না হয় তবে লাল লিপস্টিক লাগানোর কারণ কি? শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করা লিপস্টিক তার আছে।
লাল লিপস্টিক মুছে ফেলে অহনা। মেরুন রঙয়ের লিপস্টিক নিয়ে খুব যত্ন সহকারে ঠোঁটে লাগায়। ঠিক হয়নি ভেবে আবার মুছে ফেলে। বার বার ঠোঁটের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এক বক্স টিস্যু পেপার প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশেষে লিপস্টিক ঠিক হয়েছে ভেবে অহনা যখন বাইরে এসে বললো- চল, এবার যাই।
অহনার দিকে তাকিয়ে এক ঝলক দেখেই নিপুণের কানে কানে কি যেন বলল সামি। নিপুণ তাকালো অহনার দিকে। তারপর দু’ভাই একসঙ্গে হেসে উঠলো। তাদের হাসি থামছে না। হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে দু’ভাই। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে ভেবে ঘরে গেল অহনা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভাল করে দেখল নিজেকে। না- ঠিকই আছে। তবে ওরা হাসছে কেন?
রুমের বাইরে আসতেই নিপুণ বললো- কিরে আপু, খুব ক্ষুধা লেগেছে? কিছু খাসনি।
কেন, এ কথা বলছিস কেন?
না এমনিই। তারপর আবার দু’ভাই হেসে গড়াগড়ি।
অহনা বললো- সামি লক্ষ্মী ভাই, কি সমস্যা হইছে বল না। এই নিপুণ...।
সামিকে উদ্দেশ্য করে নিপুণ বললো- বলবি না। কিচ্ছু হয় নাই। চল যাই।
সামির পেটে কথা সহ্য হয় না। সে বলে ফেলে-
আপু তুমি লিপস্টিক খাইছো ক্যান? দাঁতে লিপস্টিক।
অহনা দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখলো তার সামনের দুইটা দাঁতে লিপস্টিক লেগে আছে। টিস্যু দিয়ে মুছে বাইরে বেরিয়ে আসতে নিপুণ বললো-
তোর সাজুগুজু হইছে আপা?
সাজতে পারলাম কই। এত তাড়াহুড়া করে কি সাজগোজ করা যায়। দেখতে ভাই সব ঠিক আছে কিনা?
হ্যাঁ, সবই ঠিক আছে। তবে...
আবারও হেসে ওঠে দু’ভাই। অহনা বিব্রত। নিশ্চয়ই আরও কোন সমস্যা আছে। এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তার রাগ উঠছে। সে নিপুণকে বললো- বল না কি হইছে?
আপা, টিপটা উল্টো পড়েছো।
এবার নিজের ওপর খুব বিরক্ত অহনা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দেখলো টিপটা সত্যি উল্টো হয়েছে। রাগে সে টিপ উঠিয়ে ফেললো- এতবার ঠিক করার পরও যখন টিপ উল্টা হয়েছে, তখন সে টিপই পড়বে না।
ওরা যখন বিমানবন্দরে পৌঁছলো তখন সূর্য সবে উঁকি দিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিপুণ দেখলো ৫টা ১০। প্রবেশমুখে গাড়ি আটকে দিল পুলিশ। ভেতরে যাওয়া নিষেধ। দুই কনস্টেবল দু’দিকে পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। একজন এসে ড্রাইভারকে ধমকাচ্ছে। কনস্টেবলের বুকপকেটে লেখা সাত্তাব। বিন্দু মুছে গিয়ে র ব হয়ে গেছে। সাত্তারের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না লোকটা বদমেজাজী কিংবা রাগী স্বভাবের। পোশাকটা তাকে বদমেজাজি ও উগ্র করে তুলেছে।
নীল রঙের শার্ট আর খাকি প্যান্টের পোশাকটা বেশ মানিয়েছে সাত্তারের গায়ে। স্মার্ট লাগছে। পুলিশের পোশাক কখনও তাদের শরীরে মানায় না। দেখতে ক্ষেত ক্ষেত লাগে। একেবারে ল্যাবেনডিস। চলাফেরা, আচার-আচরণ, এমনকি কথাবার্তায়ও পুলিশ আনস্মার্ট। ভদ্রভাবে কথা বলা যেন তাদের অভিধানে নেই। ট্রেনিংয়ের সময় বোধহয় তাদের এভাবেই শিক্ষা দেয়া হয়। কনস্টেবল সাত্তার আবারও ধমকাচ্ছে ড্রাইভারকে। বলছে- তোরে না কইছি গাড়ি ঘুরাইতে। ঘুরাস না ক্যান হারামজাদা।
সাত্তারের হাতে একটি লাঠি। ওই লাঠি দিয়ে গাড়িতে সজোরে বাড়ি মারে সে। ড্রাইভারকেও মারার জন্য লাঠি ওঠায়। তবে মারে না। মুখে ক্ষোভ ঝরে পড়ে।
ওই ব্যাটা যাবি নাকি দিমু একটা।
ভাড়া করা ট্যাক্সি ক্যাবে করে এসেছে অহনারা। ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না দেখে নিপুণ গাড়ি থেকে নামে। এরই মধ্যে একটি প্রাইভেট কার চলে যায় ভেতরে। কনস্টেবলকে নিপুণ অনুরোধ করে- তাদের গাড়িটি ছেড়ে দিতে। কনস্টেবল একরোখা। এক কথা তার- সম্ভব না।
দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক দারোগা। নিপুণ তার কাছে যায়। ওখান থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। অহনা ও সামিকে নামতে বলে। অহনাকে উদ্দেশ্য করে ড্রাইভার বলে- আপা, কিছু না দিলে গাড়ি ছাড়বো না।
অহনা গাড়ি থেকে নেমে দারোগার কাছে যায়। কিছুক্ষণ কথা হয়। অহনা ফিরে আসে। দারোগা কনস্টেবলকে হাত দিয়ে ইশারা করে ছেড়ে দিতে। ওরা ভেতরে চলে যায়। সাত্তার তার সঙ্গী কনস্টেবলকে বলে - সুন্দর মাইয়া দেইখ্যা স্যারে হুইত্তা পড়ছে।
বিমানবন্দরে হুলস্থূল। নিরাপত্তা কর্মীরা ছোটাছুটি করছেন। কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। হুইসেল বাজিয়ে চলেছে একজন। গ্লাসের ভেতরে দেখা যাচ্ছে এক জায়গায় জটলা। কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর জানা গেল ডলার, পাউন্ড, ইউরো সহ কয়েক কোটি টাকা পাচার হচ্ছিল। পাচারকারীকে ধরতে পারেনি।
সকাল সাতটা ২৫ মিনিটে বিমান অবতরণ করেছে। গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে লোজকন বেরিয়ে আসছে। অহনা, নিপুণ ও সামির চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে পারভেজকে। হঠাৎ চিৎকার করে ওঠলো অহনা- সামি, ওই যে তোর দুলাভাই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে বেরিয়ে এলো পারভেজ।
গাড়িতে বসে সামি ও নিপুণের সঙ্গে নানা কথা বলছে পারভেজ। আড়চোখে তাকাচ্ছে অহনার দিকে। মুখে আনন্দের তৃপ্ত ঝিলিক। এর মধ্যে শুধু একবার অহনাকে জিজ্ঞেস করেছে- কেমন আছো। অহনার ছোট উত্তর- ভাল, তুমি? পারভেজও উত্তর দিল- ভাল।
গাড়ি যখন বাসার উদ্দেশে রওনা হয় তখন পুরো পথের অনেকটা সময়ই খোলসের ভেতরে আটকে থাকে অহনা। ভেতরে সহস্র তোলপাড়। কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই। সঙ্গে ছোট ভাইয়েরা রয়েছে। নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে ভাল্‌লাগছে না অহনার। ভেতরে খুবই নাজুক অবস্থা তার।
কিছুক্ষণ পর টের পায় অহনা, পারভেজ এসেছে বলে কি সে আনন্দিত না শঙ্কিত। হঠাৎ বুকের ভেতর কম্পন। অজানা ভয়। পারভেজ মৃত্যুর দূত হয়ে ফিরে নি তো! ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায় শরীরে। হাত-পা শক্ত হয়ে আসে।
নিপুণ ও সামির সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে অহনাকে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করে পারভেজ। হু-হা করে উত্তর দেয় সে। সান্ত্বনাসুলভ বাক্য।
বাসার কাছাকাছি পৌঁছে যায় ওরা। গলির ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়- ল্যাম্পপোস্টের নিচে একটা মাস্তান গোছের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দু’টো ভয়ঙ্কর লাল। উস্কো পোশাক। গালের ওপর ব্রণ ও খোঁচা খোঁচা দাড়ির আবর্জনা।
বাবা-মা বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে মুহূর্তেই মাথা থেকে সব জঞ্জাল সাফ।

চলবে
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮
নগ্নবেলা-৯
নগ্নবেলা-১০
নগ্নবেলা-১১
নগ্নবেলা-১২
নগ্নবেলা-১৩
নগ্নবেলা-১৪
নগ্নবেলা-১৫
নগ্নবেলা-১৬
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:২৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×