সময়টা ২০১৫ সালের মে মাসের শেষ দিকে। যাচ্ছিলাম ভারতের জম্মু থেকে পেহেলগামে। যারা ঐ পথে গিয়েছেন তারা জানেন মাঝে মাঝেই ঐ পথে বেশ যানজটের সৃষ্টি হয়। তেমনি এক যানজটের ফাঁদে পরে ছিলাম আমরা। তাই এক সময় গাড়ি থেকে নেমে এসেছিলাম হাঁটাহাটি করার জন্য। তখন হঠাত করে চোখে পড়ে এই গাছটি। জীবনে সেই প্রথম তাঁকে দেখলাম অবাক চোখে। সেটি ছিলো মাঝারি আকারের গাছ। সাথে কোনো জুম ল্যান্স না থাকায় ক্লোজ কোনো ছবি তুলতে পারি নি। সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের এমন বিন্যাস আমার নজর কেড়েছিলো ভালো ভাবেই। তখন এই গাছ বা ফুলটি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না আমি। পরে খোঁজ নিয়ে এর নাম জানতে পারি Black Locust!!
শিরনামের কালো পঙ্গপাল নামটি সত্যিকারের বাংলা নাম নয়।
কি অদ্ভূত নাম!! যতদূর জানি Locust অর্থ হচ্ছে পঙ্গোপাল। আর সাদা এই ফুলের নাম Black Locust!! মনে হয় নামের এই Black অংশটুকু রাখা হয়েছে ফুলের জন্য নয় বরং গাছের ছালের রং এর জন্য। এই গাছের ছাল বেশ কালো। সে নাহয় মানা গেলো, Locust বা পঙ্গপাল কেনো? তবে বলে রাখা ভালো এর আরেকটি প্রচলিত নাম হচ্ছে White Locust. এই ফুলের আর দুটি অদ্ভূত নাম রয়েছে Bastard Locust এবং False Acacia. এই দুটি নামকরণের কারণ আমার মোটেও জানা নাই। তবে এর Scientific নাম Robinia pseudoacacia এর প্রথম অংশ Robinia / রবিনিয়া নামটিই বেশী জনপ্রিয়।
Locust বা পঙ্গপাল কেনো?
John the Baptist - উইকি পিডিয়া
বলা হয় Locust বা পঙ্গপাল নামটি খ্রীষ্টধর্মের যাজক মিশনারিরা দিয়েছিল। বাইবেলে বলা হয়েছে John the Baptist মরুভূমিতে জীবিত ছিলেন পঙ্গপাল খেয়ে। অথচো সেখানের কোনো কিট-পতঙ্গ, পোকামাকড় বা পঙ্গপাল ছিল না। তিনি বেঁচেছিলেন Carob গাছের ফল বা বীজাধার খেয়ে, যা দেখতে কিছুটা পঙ্গোপালের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। যখন খ্রীষ্টান মিশনারিরা প্রথম Robinia pseudoacacia গাছটি দেখতে পায় তখন তাঁরা লক্ষ্যকরে এই গাছের ফল গুলি Carob গাছের ফলের সাথে অনেকটা মিলে যায়, তাই তারা এর নাম দেয় Locust গাছ।
Carob গাছের ফল বা বীজাধার - উইকি পিডিয়া
আমি যতটুকু জানি এই ফুলটির বাংলা কোন নাম নেই। এই গাছটি নিশ্চয়ই বাংলাদেশেও আছে, তবে আমার চোখে পরেনি এখনো। এই ফুলের খুব কাছাকাছি দেখতে কিন্তু ভিন্ন রং-এর অন্তত্য ৩টি ফুল বাংলাদেশে দেখেছি আমি - পিঠেসরা, মনিমালা ও ফালগুনমঞ্জরী।
পিঠেসরা
মণিমালা
ফালগুনমঞ্জরী
Black Locust এর সাক্ষাত আমি ভারতে পেলেও এরা কিন্তু উত্তর আমেরিকার অধিবাসী। ইউরোপেও নাকি এদের ব্যাপকতা নজরে পরে। সম্ভবত আদিতে ব্রিটিশরা ভারতের হিল স্টেশনগুলি চালু করার সময় Black Locust গাছটি ভারতবর্ষে নিয়ে আসে। সেখান থেকেই ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় এর বিস্তার ঘটেছে।
Black Locust গাছগুলি সাধারণত ৪০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা পায়। এদের ব্যাস ২ থেকে ৪ ফুট হতে পারে। এরা পর্ণমোচী গাছ, অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের সমস্ত পাতা ঝরে যায়। এইগাছের ছাল হয় ঘনো কালো এবং গভীরভাবে খাঁজকাটা থাকে। এদের পাতা গুলি যৌগিকপত্র, অর্থাৎ পত্রফলকের মধ্যশিরায় স্বতন্ত্র পত্রক (ছোট পাতা) থাকে। পত্রকগুলি লম্বাটে ডিম্বাকৃতি এবং উভয় প্রান্ত গোলাকার। ছোটো গাছের মাটির নিচের দিকের ডালগুলি মাঝে মাঝে কাঁটাযুক্ত হলেও বড় গাছগুলিতে কাঁটা থাকে না। তবে পত্রফলকের গোড়ায় সাধারণত এক জোড়া ছোট কাঁটা থাকে।
Black Locust ফুলগুলি মে - জুন মাসে ফোটে। ফুলগুলি ৭ থেকে ১০ দিন থাকে। ছোট ছোটো ফুলের এই ফুলগুচ্ছ গুলি তীব্র সুগন্ধযুক্ত হয়। ফুলের রং সাধারণত সাদা, তবে কিছু কিছু হালকা গোলাপী এবং বেগুনিও হতে পারে। ফুলে প্রচুর পরিমাণে মধু থাকে। প্রতিটি ফুল নিখুঁত, অর্থাৎ একই ফুলে পুরুষ এবং মহিলা অংশ রয়েছে।
এদের ফলগুলি মটরশুঁটির মতো দেখতে, ২ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। প্রতিটি ফলে ৪ থেকে ৮টি বীজ থাকে। এরা শরতের শেষ দিকে পাঁকতে শুরু করে এবং বসন্তের শুরু পর্যন্ত গাছে ঝুলে থাকে। এদের বীজে একটি পুরু বীজ আবরণ থাকে যার ফলে বীজ অঙ্কুরিত হবার পরিমান খুবই কম। বীজ থেকে চারা কম জন্মালেও এরা মাটির নিচ দিয়ে শিকরের মাধ্যমে নতুন চারা জন্ম দেয়। চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছের কাঠ খুবই শক্ত হয়। এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে টেকসই কাঠ হিসেবে বিবেচিত।
Black Locust গাছগুলি প্রচন্ড কষ্টসহিষ্ণু প্রজাতি হলেও এরা ছায়া পছন্দ করে না। সাধারণত যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো পরে এবং মাটি শুষ্ক থাকে তেমন যায়গায় এদের জন্য উপযোগী।
ছবি তোলার স্থান : জম্মু থেকে পেহেলগাম যাওয়ার পথে, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৬/০৫/২০১৫ ইং
=================================================================
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে
ফুলেদের কথা
অশোক, অর্কিড, অলকানন্দা (বেগুনী), অলকানন্দা (হলুদ), অলকানন্দা, আকন্দ, আমরুল,
কলাবতী, কচুরিপানা ফুল, কসমস, কালো পঙ্গপাল, কর্ণফ্লাওয়ার, কন্টকলতা
গাঁদা, গামারি, গোলাপ, গোলাপি আমরুল, গ্লুকাস ক্যাসিয়া,
ঘোড়া চক্কর
জ্যাকারান্ডা,
ঝুমকোলতা
ডালিয়া
তমাল, তারাঝরা
দাঁতরাঙ্গা, দাদমর্দন, দেবকাঞ্চন, দোলনচাঁপা
ধুতুরা
নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, নীল হুড়হুড়ে, নীল জ্যাকারান্ডা,
পপী, পুন্নাগ
ফাল্গুনমঞ্জরী, ফুরুস (সাদা)
বরুণ, বড়নখা, বিড়াল নখা, বাদুড় ফুল, বাগানবিলাস, বোতল ব্রাশ, ব্লিডিং হার্ট
ভাট ফুল
মাধবীলতা, মধুমঞ্জরি
রঙ্গন, রুদ্রপলাশ, রাজ অশোক, রাধাচূড়া, রাণীচূড়া
লতা পারুল
শাপলা (সাদা), শিউলি, শিবজটা, সুলতান চাঁপা
জবা - ১, জবা - ২, সাদা জবা, ঝুমকো জবা, লঙ্কা জবা, পঞ্চমুখী জবা, বহুদল জবা, রক্ত জবা, হলুদ জবা, গোলাপী জবা
=================================================================
ফুলেদের ছবি
ফুলের রাণী গোলাপ - ০১, ফুলের রাণী গোলাপ - ০২, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৩, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৪
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৫, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৬, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৭, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৮
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৯, ফুলের রাণী গোলাপ - ১০, ফুলের রাণী গোলাপ - ১১, ফুলের রাণী গোলাপ - ১২
ফুলের রাণী গোলাপ - ১৩, রাতের গোলাপ - ০১, রাতের গোলাপ - ০২, রাতের গোলাপ - ০৩
অর্কিড-২, অর্কিড-৩, অর্কিড-৪, অলকানন্দা (বেগুনী)-২, অলকানন্দা (বেগুনী)-৩, আমরুল-২,
কসমস-২, কসমস-৩, কসমস-৪, কসমস-৫, কসমস-৬, কর্ণফ্লাওয়ার-২,
গাঁদা-২, গ্লুকাস ক্যাসিয়া-২, গোলাপি আমরুল-২,
ঝুমকোলতা-২
ডালিয়া-২, ডালিয়া-৩, ডালিয়া-৪,
তারাঝরা- ২, দাদমর্দন-২
নাগলিঙ্গম-২, নাগলিঙ্গম-৩
পপী-২, পপী-৩, পপী-৪,
বাগানবিলাস-২, বোতল ব্রাশ-২, বোতল ব্রাশ-৩,
মাধবীলতা-২
রাধাচূড়া-২, রাধাচূড়া-৩, লতা পারুল-২
গামারির হলুদ বন্যা, আরো কিছু গামারি, শিমুল গাছে আগুন, কদম ফুলের ১০টি ছবি, অশোক ফুলের ছবি, নাগেশ্বর ও ভোমড়, পলাশ ফুটেছে......, ডালিয়া, ধুতরা ফুল, একটি দাঁতরাঙ্গা ফুল
মিষ্টি জলপাইয়ের ফুল, ডালের ফুল
=================================================================
গাছেদের কথা
বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের সচিত্র তালিকা, অশোক সমগ্র, কৃষ্ণচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক, চাঁপা নিয়ে চাপাবাজি, বিলম্ব, মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ, জল জমানি পাতা, শিউলি
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২২ রাত ৩:৪০