ফুলের নাম : তমাল
অন্যান্য নাম : তমালক, বনগাব, মহেশকাণ্ড, বিস্তেন্দু, জগলকান্তি, মানজাকারা, ব্যাংকিনি, ভাক্কনাই, কালো ধোয়া, কেন্দু, দাকানান, নীলধ্বজ, তাপিষ্ণু, কলতান, মহাবর, পীলতাল, কালস্কন্দ ইত্যাদি।
Common Name : Mottled Ebony, Bombay ebony, Mountain persimmon
Scientific Name : Diospyros montana বা Diospyros cordifolia
তমালের কথা শুনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর তেমনি, তমাল গাছ বা ফুল দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যাও খুব বেশী নেই।
বাংলা সাহিত্যে তমালের উপস্থিতি উজ্জ্বল। পিয়াল-তমাল, হিজল-তমালের কথা যেমন আছে তেমনি আছে তাল-তমালের কথাও।
তাল-তমালের কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেন তার কবিতা এইভাবে-
বায়ু বহে পূর্বসমুদ্র হতে
উচ্ছল ছলো-ছলো তটিনীতরঙ্গে।
মন মোর ধায় তারি মত্ত প্রবাহে
তাল-তমাল-অরণ্যে
ক্ষুব্ধ শাখার আন্দোলনে॥
আর তিনি পিয়াল-তমালের কথাও লিখেছেন তার কবিতায়-
গহন ঘন বনে পিয়াল-তমাল-সহকার-ছায়ে
সন্ধ্যাবায়ে তৃণশয়নে মুগ্ধনয়নে রয়েছি বসি॥
শ্যামল পল্লবভার আঁধারে মর্মরিছে,
বায়ুভরে কাঁপে শাখা, বকুলদল পড়ে খসি॥
অথবা বলেছেন এইভাবে-
সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে।
কে তারে বাঁধল অকারণে॥
গতিরাগের সে ছিল গান, আলোছায়ার সে ছিল প্রাণ,
আকাশকে সে চমকে দিত বনে
মেঘলা দিনের আকুলতা বাজিয়ে যেত পায়ে
তমাল ছায়ে-ছায়ে।
ফাল্গুনে সে পিয়ালতলায় কে জানিত কোথায় পলায়
দখিন-হাওয়ার চঞ্চলতার সনে॥
তমাল- পিয়ালের কথা কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-
সখি কই গোপীবল্লভ শ্যামল পল্লব কান্তি
সখি আমার হরি বিনে হরি চন্দনে নাহি শান্তি।
ঐ দেখ দেখ শ্যাম দাঁড়িয়ে
ও নহে কদম তমাল পিয়াল পিয়া মোর ঐ দাঁড়িয়ে।
নজরুলের আরো অনেক কবিতায় উঠে এসেছে তমালের কথা-
মোরা আর জনমে হংস–মিথুন ছিলাম নদীর চরে
যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।।
তমাল তরু চাঁপা–লতার মত
জড়িয়ে কত জনম হ’ল গত,
সেই বাঁধনের চিহ্ন আজো জাগে হিয়ার থরে থরে।।
অথবা-
ভুলে যা তোরা রাধারে কৃষ্ণ-নিশির আঁধারে
হারায়ে সে গেছে চিরতরে,
কালো যমুনার জলে ডুবেছে সে অতল তলে
ভেসে গেছে সে শ্যাম-সাগরে।।
ঐ বাঁশি বাজিছে শোন রাধা ব’লে,
তরুণ তমাল চলে, অঙ্গ-ভঙ্গে শিখি-পাখা টলে।
অথবা
এল শ্যামল কিশোর,
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা।
সুনীল শাড়ি পরো ব্রজনারী
পরো নব নীপ-মালা অতুলনা।
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা॥
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন বলেছেন-
‘জালি লাউয়ের ডগার মত
বাহু দুখানি সরু
গা-খানি তার শাওন মাসের
যেন তমাল তরু’।
আর জীবনান্দ দাশ লিখেছেন তমালের নীল ছায়ার কথা-
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ দেখেছিল
আরো লিখেছেন -
এসেছে দখিনা-ক্ষীরের মাঝারে লুকায়ে কোন্-এক হীরের ছুরি!-
তার লাগি তবু ক্ষ্যপা শাল নিম, তমাল বকুলে হুড়াহুড়ি!
লোক সাহিত্যে আছে-
"না পেড়াইও রাধার অঙ্গ
না ডুবাই ও জলে,
মরিলে তুলিয়া রাইখো
তমালের ও ডালে"।
তমাল গাছের বাকলের রং কালো আর কৃষ্ণের গায়ের রংও কালো, তাই তমাল রাধারও খুব প্রিয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায়ও এই কালো তমালের বিষয়টি উঠে এসেছে -
ওরে শাঙন-মেঘের ছায়া পড়ে
কালো তমাল-মূলে,
ওরে এপার ওপার আঁধার হল
কালিন্দীরই কূলে।
ঘাটে গোপাঙ্গনা ডরে
কাঁপে খেয়া তরীর 'পরে,
হেরো কুঞ্জবনে নাচে ময়ূর
কলাপখানি তুলে।
ওরে শাঙন-মেঘের ছায়া পড়ে
কালো তমাল-মূলে।
আর কাজী নজরুল ইসলাম কালো তমালের কথা লিখেছেন এই ভাবে-
রুম ঝুম ঝুম বাদল নূপুর বোলে বোলে,
তমাল বরণী কে নাচে, কে নাচে গগন কোলে।।
তমাল নিয়ে একটা প্রচলিত চুটকিও রয়েছে-
এক শিক্ষক ক্লাশে পড়াচ্ছিলেন - কপল ভিজিলো নয়নেরই জলে....
হঠাত এক ছাত্র মাঝ পথে বাধা দিয়ে বললো স্যার চোখের জলে কপাল কেমনে ভিজবো?
রেগে গিয়ে স্যার বললেন - দাঁড়া ভিজানোর ব্যবস্থা করতেছি।
"কপল ভিজিলো নয়নেরই জলে,
পা দুটি তার বাঁধা ছিল তমালেরই ডালে।"
আসলে ছাত্রটি জানতো না যে কপল অর্থ কপাল নয়, বরং গাল।
সাহিত্যে যতোই তমালবন্দনা হোক বাংলার প্রকৃতিতে তমালের উপস্থিতি কিন্তু অতিনগন্য। প্রকৃতিতে তমাল দুর্লভ হলেও দুষ্পাপ্য নয়। তাই বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তমালের আদি নিবাস মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে।
শাখা আর পত্র পল্লবিত তমাল গাছ মাঝারি আকারের দীর্ঘজীবী বৃক্ষ। এদের কাণ্ড দৃষ্টি নন্দন খাটো, অমসৃণ, আঁকাবাঁকা এবং কালো। গাছের মাথা পত্রঘন এবং ছায়াময়ী।
এদের পাতা লম্বা উপবৃত্তাকার। মূলত পাতার গোড়ার দিকটা গোলাকার এবং অগ্রভাগ কিছুটা সুচালো বল্লমাকৃতি। পাতার রঙ সবুজ।
বসন্তে তমাল গাছে ফুটে ছোট ছোট সাদা সাদা ফুল ফুটে। ফুল গুলি ও সুগন্ধযুক্ত। তমালের পুং ও স্ত্রী ফুল আলাদা আলাদা হয়।
তমালের ফল দেখতে ছোট গাবের মতো গোল, পাঁকলে কিছুটা হলুদে রঙের হয় গাবের মতোই। তাই একে একে বন গাবও বলে। যদিও এই ফল বিষাক্ত।
হিন্দু সম্প্রদায় তমালকে পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে পূজা দিয়ে থাকেন। বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দিরের প্রাঙ্গনে আমি তমালে গাছ দেখেছি। বিশেষ করে মহেশখালী দ্বীপের আদিনাথ মন্দিরে বেশ পুরনো একটি তমাল গাছ আছে।
তমালের ফল বিষাক্ত। এমনকি পাতাও মাছেদের জন্য ক্ষতিকর। তবে তমালের প্রতিটা অংশই ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ। ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার দেখা যায়। জ্বর, ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, প্রসব পরবর্তী জ্বর, বিষাক্ত মাকড়সার কামড় ইত্যাদিতে তমাল গাছের নানান অংশ ব্যবহৃত হয়।
ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর, ঢাকা।
=================================================================
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে
ফুলেদের কথা
অশোক, অর্কিড, অলকানন্দা (বেগুনী), অলকানন্দা (হলুদ), অলকানন্দা, আকন্দ, আমরুল,
কলাবতী, কচুরিপানা ফুল, কসমস, কালো পঙ্গপাল, কর্ণফ্লাওয়ার
গাঁদা, গামারি, গোলাপ, গোলাপি আমরুল, গ্লুকাস ক্যাসিয়া,
ঘোড়া চক্কর
জ্যাকারান্ডা,
ঝুমকোলতা
ডালিয়া
তমাল, তারাঝরা
দাঁতরাঙ্গা, দাদমর্দন, দেবকাঞ্চন, দোলনচাঁপা
ধুতুরা
নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, নীল হুড়হুড়ে, নীল জ্যাকারান্ডা,
পপী, পুন্নাগ
ফাল্গুনমঞ্জরী, ফুরুস (সাদা)
বরুণ, বড়নখা, বিড়াল নখা, বাদুড় ফুল, বাগানবিলাস, বেগুনী অলকানন্দা, বোতল ব্রাশ, ব্লিডিং হার্ট
ভাট ফুল
মাধবীলতা, মধুমঞ্জরি
রঙ্গন, রুদ্রপলাশ, রাজ অশোক, রাধাচূড়া, রাণীচূড়া
লতা পারুল
শাপলা (সাদা), শিউলি, শিবজটা, সুলতান চাঁপা
জবা - ১, জবা - ২, সাদা জবা, ঝুমকো জবা, লঙ্কা জবা, পঞ্চমুখী জবা, বহুদল জবা, রক্ত জবা, হলুদ জবা, গোলাপী জবা
=================================================================
ফুলেদের ছবি
ফুলের রাণী গোলাপ - ০১, ফুলের রাণী গোলাপ - ০২, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৩, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৪
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৫, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৬, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৭, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৮
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৯, ফুলের রাণী গোলাপ - ১০, ফুলের রাণী গোলাপ - ১১, ফুলের রাণী গোলাপ - ১২
ফুলের রাণী গোলাপ - ১৩, রাতের গোলাপ - ০১, রাতের গোলাপ - ০২, রাতের গোলাপ - ০৩
অর্কিড-২, অর্কিড-৩, অর্কিড-৪, অলকানন্দা (বেগুনী)-২, অলকানন্দা (বেগুনী)-৩,
কসমস-২, কসমস-৩, কসমস-৪, কসমস-৫, কসমস-৬, কর্ণফ্লাওয়ার-২,
গাঁদা-২, গ্লুকাস ক্যাসিয়া-২,
ডালিয়া-২, ডালিয়া-৩, ডালিয়া-৪,
তারাঝরা- ২, দাদমর্দন-২, নাগলিঙ্গম-২,
পপী-২, পপী-৩, পপী-৪,
বাগানবিলাস-২, বোতল ব্রাশ-২, বোতল ব্রাশ-৩,
রাধাচূড়া-২, রাধাচূড়া-৩, লতা পারুল-২
গামারির হলুদ বন্যা, আরো কিছু গামারি, ঝুমকোলতা, শিমুল গাছে আগুন, কদম ফুলের ১০টি ছবি, অশোক ফুলের ছবি, নাগেশ্বর ও ভোমড়, পলাশ ফুটেছে......, ডালিয়া, ধুতরা ফুল
মিষ্টি জলপাইয়ের ফুল, ডালের ফুল
=================================================================
গাছেদের কথা
বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের সচিত্র তালিকা, অশোক সমগ্র, কৃষ্ণচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক, চাঁপা নিয়ে চাপাবাজি, বিলম্ব, মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ, জল জমানি পাতা, শিউলি
=================================================================
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০১, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০২, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৩
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৪, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৫, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৬
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৭, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৮
=================================================================
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০১, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০২, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৩
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৪, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৫, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৬
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৭, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৮, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৯
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১০, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১১, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১২
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১৩, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১৪
=================================================================
১০টি ফুলের ছবি
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ০১ , - , পর্ব - ০২ , - , পর্ব - ০২ , - , পর্ব - ০৪ , - , পর্ব - ০৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ০৬ , - , পর্ব - ০৭ , - , পর্ব - ০৮ , - , পর্ব - ০৯ , - , পর্ব - ১০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ১১ , - , পর্ব - ১২ , - , পর্ব - ১৩ , - , পর্ব - ১৪ , - , পর্ব - ১৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ১৬ , - , পর্ব - ১৭ , - , পর্ব - ১৮ , - , পর্ব - ১৯ , - , পর্ব - ২০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ২১ , - , পর্ব - ২২ , - , পর্ব - ২৩ , - , পর্ব - ২৪ , - , পর্ব - ২৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ২৬ , - , পর্ব - ২৭ , - , পর্ব - ২৮ , - , পর্ব - ২৯ , - , পর্ব - ৩০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ৩১
=================================================================
গাছ-গাছালি; লতা-পাতা
গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০১, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০২, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৩, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৪, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৫, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৬
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৪৪