somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কোন ব্লগার নই তবে আমার একটা রাশিয়ান শৈশব আছে

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুভ অপরাহ্ন। এই দুপুরে ঘুমঘুম চোখে খুব সহজেই কিন্তু শৈশবে ফিরে যাওয়া যায়। আমার দিব্যি মনে আছে দুপুরের খাওয়ার পর রাশিয়ান বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে যেতাম খুব ছোট বেলায়।

প্রগ্রতি প্রকাশনের ছাপাখানা বন্ধ হয়েছে বহু বছর আগে।এখনকার বাচ্চাদের কাছে সেই বই গুলো নেই। অনেকে শৈশবের মহামূল্যবান সম্পদ গুলো আজ আগলে রেখেছেন , বুক সেলফে রঙিন সেই শৈশব সবচেয়ে বেশি ঝলঝল করে , ঝকঝকে সোভিয়েত শৈশব।

খুব ছোটবেলায় যখন আব্বা আমাকে বই পড়ে শোনাতেন , যখন আমি বানান করেও পড়তে পারতাম না , যখন আমি স্কুলেও যেতাম না -- তখন থেকেই রাশিয়ান বইগুলো আবার সাথেই আছে। তাই সেই 'ছোটমানুষের ' বইগুলোকে মাঝে মাঝে আমি শৈশবের স্কুল বলে ডাকি !

আমি বই অনেক বই পেয়েছিলাম উত্তরাধিকার সূত্রে , বড় বোনদের থেকে। আব্বা ঢাকা অথবা যোশরে গেলে নতুন বই কিনে আনতেন। এরপর তো প্রকাশনা বন্ধই হয়ে গেলো। আমার সব বই আব্বা কিনে দিয়েছেন। আব্বা ঢাকা অথবা যশোর গেলেই বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতাম। আমাদের ওদিকে পাওয়া যেত না তেমন। একদিন অনেক রাত করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি মাথার কাছে দুইটা বই আর বেশ কয়েকটা লজেঞ্চ। অরেঞ্জ লজেঞ্চ কমলার কোয়ার মত দেখতে। সম্ভবত ২৫ পয়সা করে নিতে। সেই সকালের অনুভূতি আর বই দুটোর কথা কোনদিন ভুলবোনা। বই দুইটা ১৯৮৬ সাল থেকে আমার মাথার পাশেই থাকে।

কি চমৎকার বই গুলো ! আর কি চমৎকার ছবি ! কি চমৎকার অনুবাদ ! হুট্ করেই সময় ছুটে পালাতো।

আচ্ছা সেই বইগুলো আসলেই শিশুদের বই ছিল ? রূপের ডালি খেলা , বীর ছেলে কলিয়া কিংবা বাবা যখন ছোট ? না ! ধীরে ধীরে যখন বড় হতে লাগলাম , দেখলাম এগুলো প্রতিনিয়ত শেখাই আমাকে। বড় হবার সাথে সাথে শিখছি। রূপের ডালি খেলার বইয়ের রুটির ফুলের সেই ছেলেটা , রুটির জন্য আকুতি যার হৃদয়াবেগে জেগে উঠলো , হাত ওর থেমে গেল।দেখা গেল সেটা ক্ষিদের চেয়েও জোরালো , রুটির চেয়েও জরুরী। আচ্ছা এটা কি সত্যি ছোটদের গল্প !

কিংবা রূপের ডালি খেলার নিন্ কা মেয়ে মেয়েটা। কুৎসিত দর্শন মেয়েটা কি দেখলো কাঁচের আয়নায় ? রূপের ডালি খেলার আয়নায় সে সুন্দর ছিল। কারণ - যে ন্যায়পর অজ্ঞতায় আমরা তখন ছিলাম তাতে ভালো মানুষকে ধরা হতো সুন্দর আর খারাপ কে অসুন্দর !

কিন্তু আসলে তো এটাই হওয়া উচিত !

আমাদের কথা গুলো হয়ে উঠতো আয়না, নিনকা তাতে নিজেকে দেখতো সত্যিকারের রূপসী !

কিন্তু হাসিখুশি , মায়াময়, জীবন্ত আয়নার বদলে দেখা দিল ঠান্ডা , মসৃণ , নিস্করুণ একটা জিনিস। জীবনে এই প্রথম তাতে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখল নিনকা --- রূপসীকে খুন করলে আয়না। যতবারই আয়নার কাছে গেছে নিনকা, ততবারই কী একটা যেন মরে গেছে তার ভেতর। অদৃশ্য হলো মোরাল গ্রীবা , প্রবল দাঁত, সাগর-নীল চোখ।

ছোটবেলায় পড়া রাশিয়ান বইগুলো কোনো সময় ছোটবেলার বই ছিল না। যত বড়ো হচ্ছি ততই বুঝছি।

আমি ঠিক করেছে আমার কাছে অবশিষ্ট বইগুলো যত্নে রেখে দেব , এতদিন যেভাবে রেখেছি। কিছু বই প্রিন্ট করব। ব্লগে লিখবো আর প্রচুর গল্প শোনাবো। তাতে আগ্রহ এমনিতেই বাড়বে। শিশুদের যা শেখাবেন তাই শিখবে , যা দেবেন তাই নেবে। আমি না হয় আমার রাশিয়ান শৈশব ই দেব। ঐটাই তো আমার সম্পত্তি। আমার একান্ত সম্পদ।

আর বেশি কিছু লিখবো না। লিখে শেষ করতে পারবো না। ভালো থাকবেন। আমার রাশিয়ান শৈশব বেঁচে থাকুক।

অসংখ্য রাশিয়ান বই আমার শৈশব। আমার একান্ত শৈশব। আমার শৈশবের স্কুল। অনেক বই আমি আজও আগলে রেখে গেছি। বেশ কিছু বই হারিয়ে ফেলেছি। মাঝে মাঝেই আমি পুরোনো বই গুলো খুঁজি পুরোনো বইয়ের দোকানে। জানি পাব না , তবুও খুঁজি। রাশিয়ান বই , ননী ভৌমিক কিংবা হায়াৎ মাহমুদের কাছে আমার শৈশব চিরঋণী !
আর আর আমার বাবা ?? আপনারা কি চমৎকার শৈশব দিয়েছেন আমাকে !!



প্রিয় সামুতে ব্লগিং করছি বেশ কয়েক বছর ধরে। ব্লগিং করছি বললে ভুল হবে , বলা যেতে পারে পোষ্ট দিচ্ছি। ব্লগিং অন্য লেভেলের জিনিস। এই পোস্টগুলোর অধিকাংশই রাশিয়ান শিশু সাহিত্য বিষয় , কিছু স্মৃতিচারণ আর বেশ কিছু কবিতা। কবিতা গুলো আবেগ তাড়িত। জীবনের কথা কমই বলে। আসলে এই গুলোর আমার পোষ্টের রসদ। এর বাইরের কিছু লেখার সক্ষমতা গড়ে উঠেনি আজো। ব্লগিং বলতে যেটা বলে সেটাও হয়নি। ইচ্ছা যে হয় না তা কিন্তু না। তবে আক্ষেপ নেই এতোটুকু। কারণ আমার চমৎকার একটা রাশিয়ান শৈশব আছে। আমার শুরুটা তো সেখানেই ....






আমার সোভিয়েত শৈশব :

মানুষ উঠল আকাশে : গল্প সত্যি করার গল্প ।
নববর্ষের রাশিয়ান শৈশব : ফার গাছ
রাশিয়ান শৈশবঃ এই শীতে যারা জল ছোঁবেন না বলে পণ করেছেন
রাশিয়ান শৈশব : বাবা যখন ছোটো - ২
রাশিয়ান শৈশব : বাবা যখন ছোটো - ১
সাহসী রাশিয়ান শৈশব : বীর ছেলে কলিয়া ( শেষ অংশ )
সাহসী রাশিয়ান শৈশব : বীর ছেলে কলিয়া ( ১ম অংশ )
ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: আপেল
ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: বিপদ তারণ পাঁচন
রাশিয়ান শৈশব: ছবি ব্লগ ( বাচ্চা এবং বাচ্চাদের বাবা মায়েদের জন্য )
রুটির ফুল --- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
সাত বন্ধু ইয়ুসিকের - ( আমার সোভিয়েত শৈশব )
রূপের ডালি খেলা - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
জ্যান্ত টুপি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
সভ্য হওয়া - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মালপত্র (আমার সোভিয়েত শৈশব)
শেয়ালের চালাকি ১ (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মোরগ ভাইটি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
বীরব্রতী ভাসিয়া -- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
আমার সোভিয়েত শৈশব - আমার শৈশবের স্কুল !
শুনছি , ঘাস বাড়ছে...






সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৩৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×