somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

৩১ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিস্তি-১৮

বাসায় পৌঁছে দুঃসংবাদটা শুনলো অহনা। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় নীদ মারা গেছে। সকাল সাতটায় অহনার মোবাইলে ফোন এসেছে। ফোন রিসিভ করেছেন রাবেয়া খাতুন। বিমানবন্দরে ফোন নিয়ে যায়নি অহনা। তা নাহলে সে-ই খবরটা জানতে পারতো।
রাবেয়া খাতুন জানালেন- কে ফোন করেছে নাম বলেনি। ফোন করে তোকে চাইলো। বললাম- এয়ারপোর্ট গেছে। তখন বললো- ওকে একটা খবর দেবেন। ওর বান্ধবী নীদ মারা গেছে।
গত দু’দিন থেকে মন ভাল নেই অহনার। কোন কারণ ছাড়াই মনটা খারাপ। বিষণ্নতা কাটছে না। অহনা খেয়াল করেছে- কোন দুঃসংবাদ পাওয়ার আগে তার এ রকম হয়। আজ সেই সংবাদটা পেল।
পারভেজ জানতে চাইলো কে নীদ? অহনা জানায়- নীদ তার বান্ধবী। খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী যাকে বলে। বন্ধু-বান্ধব বহু থাকে। তার মধ্যে দু’একজন থাকে একটু আলাদা। যাকে বলে গলায় গলায় ভাব। নীদ ছিল তেমন। অহনা পারভেজকে বললো- তুমি রেস্ট নাও। আমি নীদকে দেখে আসি। মা, নীদের লাশ বাসায় নিয়ে গেছে নাকি হাসপাতালে।
এখন বাজে ১০টা। ফোন করেছে সাতটায়। এখন বাসায়ই থাকার কথা।
পারভেজ বললো- দাঁড়াও অহনা, আমি যাবো তোমার সঙ্গে।
এতটা পথ জার্নি করে এসেছো। তুমি বড্ড টায়ার্ড। রেস্ট নাও। আমি এক নজর দেখেই চলে আসবো।
আমি মোটেও টায়ার্ড না। চলো।
জাফর সাহেবও যেতে চাইলেন। শরীর খারাপ তাই অহনা তাকে নিল না।
রাস্তায় বেরিয়ে ট্যাক্সি নিতে চাইলো পারভেজ। অহনা বললো- সামান্য পথ, রিকশায় যাওয়া যাবে।
একটা রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসলো ওরা। এই রিকশাওয়ালা ভাড়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলো না। কে জানে যাওয়ার পর ভাড়া নিয়ে গেঞ্জাম করে কিনা। কিছু রিকশাওয়ালা আছে ভাড়া না বলে যাত্রী উঠায়। যাওয়ার পর ভাড়া নিয়ে শুরু করে ক্যাচাল।
কড়া রোদ উঠেছে। ভ্যাপসা গরম। রোদ দেখে মনে হচ্ছে না এখন সকাল ১১টা। ঘেমে একাকার অহনা। তার নাকেও ঘাম জমেছে। যে নারীর নাক ঘামে সে নাকি খুব স্বামী সোহাগী হয়। মাথায় করে রাখে স্বামী। হাসলে যাদের গালে টোল পড়ে তারা হয় স্বামীখেকো। অল্প বয়সে বিধবা হয়। যদিও এসব কথা বিশ্বাস করে না অহনা।
রিকশা এগোচ্ছে না। রাস্তায় জ্যাম। রিকশায় বসে থাকতে অসহ্য লাগছে। অহনার ইচ্ছা করছে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে রওনা দেয়। এরই মধ্যে তার কাঁধে হাত রাখে পারভেজ। অহনাকে তার দিকে টেনে আনতে চায়। তার ইচ্ছা- আরও একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে যদি বসা যায়। এতে অহনার সায় থাকলেও গরমের জন্য ভাল্‌লাগছে না।
পারভেজ বলে- ওহ মাই গড! কোনদিনই কি এ দেশের উন্নতি হবে না? আমাদের ইতালিতে কিন্তু কখনও এমন হয় না অহনা। তুমি বিশ্বাস করতে পারবা না সবকিছু কেমন সাজানো। একেবারে ছবির মতোন। সবকিছু সিস্টেমের ভেতর চলে। আর এখানে! ওহ্‌ ভাবা যায় না। দম বন্ধ হয়ে আসে।
পারভেজ একাই কথা বলে চলে। অহনা চুপচাপ। নিরুত্তর। সে ভাল মন্দ কিছুই বলছে না। মাঝে-মধ্যে পারভেজের মুখের দিকে তাকায়। মৃদু হাসে। নীদ মারা গেছে এ জন্য তার মন খারাপ নাকি স্বামী আতঙ্কে ভুগছে বোঝা যাচ্ছে না। ব্যাপারটা আঁচ করতে পারে পারভেজ। বলে- বান্ধবীর জন্য কি তোমার মন খারাপ?
ভাল-মন্দ কিছু বলে না অহনা। স্বামীর দিকে তাকায়। পারভেজ সান্ত্বনা দেয়- দেখো, এ পৃথিবী দু’দিনের। এখানে আমরা কেউ থাকবো না। আজ আমি কাল তুমি- এই তো খেলা। এ নিয়ে চিন্তা করো না প্লিজ। আমি এতদিন পর ফিরে এসেছি, তুমি যদি এভাবে থাকো...।
অহনা খেয়াল করে কথাবার্তায় পরিবর্তন এসেছে পারভেজের। মাথা তুলে স্বামীর দিকে তাকায়। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করে- আচ্ছা তুমি তো রোমে থাকো।
হ্যাঁ, কেন বলো তো?
নীদের স্বামীও রোমে থাকে।
তাই নাকি, কোন জায়গায়?
তা জানি না।
কিছুক্ষণ থেমে থেকে আবার প্রশ্ন করে অহনা- আচ্ছা ইতালিতে এইডস-এর সংক্রমণ খুব বেশি?
মানে, বুঝলাম না।
বলছি এইডস আক্রান্ত লোকের সংখ্যা কত?
তা বলতে পারবো না। কিন্তু কেন, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
না, এমনিই। কৌতূহল।
আচ্ছা, নীদের কি হয়েছিল।
খুব আস্ত করে অহনা বলে- এইডস।
অহনা কথা বলে। তবে সে কথায় প্রাণ নেই। ছন্দ নেই। নীদদের বাসার সামনে এসে থামে রিকশা। ওরা বাড়ির ভেতরে যায়।
চলবে
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮
নগ্নবেলা-৯
নগ্নবেলা-১০
নগ্নবেলা-১১
নগ্নবেলা-১২
নগ্নবেলা-১৩
নগ্নবেলা-১৪
নগ্নবেলা-১৫
নগ্নবেলা-১৬
নগ্নবেলা-১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×