somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ কিস্তি

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক শেষ করে ভেতরে ঢোকার আগে অহনার কাছে আসে পারভেজ। হাত ধরে বলে- আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার ওপর অনেক জুলুম করেছি। জোর খাটাতে চেষ্টা করেছি। যা মোটেও উচিত হয়নি। এ জন্য আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিও। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার পরিচয়। আমার সীমাবদ্ধতা।
দু’চোখ উপচে অশ্রুর ধারা উথলে পড়ে। কাঁপা কণ্ঠের উচ্চারণ- আসলে আমার মান-অপমান বোধ খুব কম। ছোটকাল থেকে সকলের মুখে তা-ই শুনে এসেছি। টাকার জন্য জীবনে নিজেকে কত জায়গায় কতভাবে বিকিয়েছি। মানুষের লাথি, ধাক্কা খেতে খেতে কেমন ভোঁতা হয়ে গেছি। কোন কিছুতেই গা করি নি। শিক্ষাও নেই নি। অথচ দেখো- তোমার একটা কথা আমাকে বড় বেশি অপমানিত করলো। আমার সমস্ত সত্ত্বা ও অস্তিত্বে সজোরে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর কাছ থেকেও...। যাকে আমি জীবন দিয়ে ভালবাসি। তবে আজ মনে হয় এটার খুব বেশি দরকার ছিল। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নাও, এটা ধরো। এখন খুলবে না। আমি যখন ভেতরে চলে যাবো। কিংবা বিমানে উঠে যাবো তখন এটা খুলবে। আসি, ভাল থেকো। সুখে থেকো।
অহনাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না পারভেজ। খামটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে হনহন করে ছুটে গেল ভেতরে। গ্লাসের মধ্য দিয়ে দেখা যায় নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে পারভেজ ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান আকাশে উড়বে। অহনার বুকে সহস্র তোলপাড়। কি আছে এই খামে। পারভেজ কি তাকে চিরমুক্তি দিয়ে গেল। এটা কি ডিভোর্স পেপার! অহনার হাত কাঁপছে। খামটা খুলবে কি খুলবে না সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নেয়। খামটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে। এরপর আস্তে আস্তে খোলে। কতগুলো মেডিকেল রিপোর্ট আর ছোট্ট একটা চিরকুট। কিসের মেডিকেল রিপোর্ট এগুলো। চোখ ঘুরে বেড়ায় পাতা থেকে পাতায়। সর্বশেষ চিরকুটে গিয়ে থামে-

অহনা
আমি অশিক্ষিত হতে পারি। কিন্তু অসৎ নই। একটা রিপোর্টের জন্য তুমি আমাকে যে কষ্ট দিলে তা মনে থাকবে চিরদিন। আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই। তোমার সব বিশ্বাস রিপোর্টে। এগুলো সেই বিশ্বাসের দলিল। একবার ভাবলে না তোমাকে কতটা ভালবাসি। অহনা, বিশ্বাস করো আমার জীবনে তুমিই একমাত্র নারী। তোমাকে ছাড়া দ্বিতীয় কোন নারীকে আমি ছুঁয়ে দেখিনি। কোনদিন ছুঁতে পারবোও না। আমি চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে তোমাকে বিশ্বাস ও আস্থার দলিল দিয়ে গেলাম। আর কোনদিন আমি দেশে ফিরে আসবো না। না, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না। তবে তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে সুখের সংসার সাজাতে পারো। পারলে ক্ষমা করে দিও।
ইতি
পারভেজ

চিঠি পড়ে স্থির থাকতে পারে না অহনা। সারা শরীরে লাভার বিচ্ছুরণ ঘটে। খামটা বুকে চেপে ধরে বসে পড়ে। ঝিম ধরে সারা গায়ে। কি তীব্র অবশতা তাকে বরফের মতো শক্ত করে তুলছে। নড়ার বৃথা চেষ্টা করছে। মোজাইক করা মেঝেটাকে মনে হচ্ছে কাঁদায় মাখামাখি। তার পা টেনে ধরছে। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা। হৃদয়ে দহন- এটা তুমি কি করলে পারভেজ। আমার একটা পজেটিভ বিষয় তুমি নেগেটিভ হিসেবে নিলা। একবারও আমার দিকটা চিন্তা করলে না। চিৎকার করে বলে- নিপুণ তোর দুলাভাইকে থামা।

পারভেজকে বহনকারী বিমান তখন আকাশে ডানা মেলে ধরেছে। অহনার চোখ আটকে থাকে সেদিকে। দেখতে দেখতে দৃষ্টিশক্তির সীমানা অতিক্রম করে বিমান। আকাশে তখন অঝোর ধারায় কান্না।

সমাপ্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮
নগ্নবেলা-৯
নগ্নবেলা-১০
নগ্নবেলা-১১
নগ্নবেলা-১২
নগ্নবেলা-১৩
নগ্নবেলা-১৪
নগ্নবেলা-১৫
নগ্নবেলা-১৬
নগ্নবেলা-১৭
নগ্নবেলা-১৮
নগ্নবেলা-১৯
নগ্নবেলা-২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×