টগর
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কাঠমল্লিকা, কাঠমালতি, দুধফুল, চাঁদনী, কড়ি, সাদা ফুল।
Common Name : Crape jasmine, Carnation of India, Chandni, Moonbeam, Pinwheel Flower, East India Rosebay, Nero's Crown.
Scientific Name : Tabernaemontana divaricata
টগর ফুলের গাছ বহুকাল আগে থেকে বাড়ির আঙ্গিনা ও বাগান সাজানোর জন্য লাগাণো হয়ে আসছে গ্রামে থেকে শহর পর্যন্ত সবখানে। টগর একটি সুন্দর আকৃতির চিরহরিৎ গুল্ম। এরা সাধারণত ২ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। চারা অবস্থা থেকেই গাছের অনেকগুলি শাখা মাটির প্রায় সমান্তরালে চারিদিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে গাছটি বড় হয়ে উঠলে ছেটে দিলে সুন্দর আকর্ষণীয় আকার দেয়া সম্ভব হয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় লিখেছেন-
ফুটে উঠলো একটি দুটি টগর
কন্ঠে মুক্তো- মালা
মরি মরি
তোমরা আজ সকালবেলার প্রসণ্নতা
এক মুহূর্তে শিশির ভেজা আলো
নর্মছলে তোমরা অন্সীরী।
‘কী সুন্দর ঐ টগর ফুল দুটো-
খোঁপায় গুঁজবো আমি!’
প্রাক-যুবতী বারান্দার প্রান্তে এসে আঁখি তুললো-
সদ্য ভোর, বিরল হওয়া, ঠান্ডা রোদ
সাংকেতিক পাখির ডাক, উপত্যকায় নির্জনতা
আমি বেতের ইজিচেয়ারে অলস।
ফুলের থেকে চোখ ফিরিয়ে নারীর দিকে
চোখই জানে চোখের মায়া দৃষ্টি জানে সৃষ্টির পূর্ণতা
একটি চাবি যেমন বহু বন্দী মুক্তি,
চাবির মতন
একপলকের চেয়ে দেখা
কললো আমায়ঃ
নারী যতই রূপসী হোক, এই মুহূর্তে মুকুটহীনা।
চেয়ার ছেড়ে উঠে, বারান্দা থেকে নেমে
টগর গছের পাশে দাঁড়িয়ে
আমি হাত বড়িয়েছি
হাত থেমে রইলো শূন্যে
পৃথিবী কাঁপে না, তবু কখনো কখনো মানুষের
ভূমিকম্পন হয়
এত বাতাস, তবু দীর্ঘশ্বাস নিতে ইচ্ছা হয় না
ভূবনময় এই মোহিনী আলোর মধ্যে দুলে ওঠে বিষণ্নতা
হাত থেমে রইলো শূন্যে
টগর গাছের পাশে হলুদ সাপ
চোখে চোখ, হিম সম্ভাষণ
কী তথ্য এনেছো তুমি, প্রহরী?
হলুদ সাপ সকালের মূর্তিমতী স্তব্ধতাকে ভেঙে
সেই ভাঙা গলায়
বলে উঠলো;
ঘূর্ণী জলের পাশে একদিন দেখে নিও
মুকের ছায়ায় রোদ্র-ভ্রমরীর খেলা!
চিরসবুজ টগর বাংলাদেশে এসেছে ক্রান্তীয় আমেরিকা অঞ্চল থেকে। এটি এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং সমুদ্রিক দ্বীপপুঞ্জগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীতে সম্ভবতো ৪০ প্রজাতির টগর আছে।
টগরের চারা করা হয় সাধারণত কলম করে। তাছাড়া বর্ষাকালে ডাল কেটে মাটিতে পুতে রাখলেও চারা হয়ে যায়। টগর সমতলের গাছ হলেও পাহাড়েও এদের বেশ দেখতে পাওয়া যায়। এরা সমতল ও পাহাড় দুই যায়গাতেই বেশ মানান সই।
কোনো যত্ন ছাড়াই ঝোপঝাড়ে, পথের ধারে, জঙ্গলে, বাঁশ ঝারে টগর ফুল এমনিতেই জন্মে থাকে। সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হতো যখন গ্রামের নির্জন পথের দুপাশে জঙ্গল ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে জংলি টগর তার ডালি সাজিয়ে বসতো। জংলি টগর সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়ে নিজের সৌন্দর্যের শুভ্রতা ছড়াতো সাদা সাদা ফুলে। মূলতো যে প্রজাতির টগর বনে জঙ্গলে জন্মাতে দেখা যায় তাকেই "জংলি টগর" বলে।
শীতকালে কম হলেও প্রায় সারা বছরই টগর গাছে ফোটে ফুল, তবে বসন্তে ফুলের পরিমান বেড়ে যায় অনেক বেশী। ফুল গন্ধহীন ও সুগন্ধীযুক্ত উভয়ই হতে পারে।
যাই আসি তারি মাঝখান দিয়ে
সকালে বিকালে।
আনমনে দেখি শিউলিগাছে কুঁড়ি ধরেছে,
টগর গেছে ফুলে ছেয়ে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
চোখের দেখায় টগরকে মোটা দাগে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।
একটি হচ্ছে একক টগর। একক টগর ফুলে পাপড়ি সংখ্যা থাকে পাঁচটি। সাধারণত একক টগরের কোনো সুগন্ধ থাকে না।
একক টগরের আরেকটি রূপ হচ্ছে জংলি টগর। জংলি টগরের এক একটি ডালে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ টি ফুল ফুটে।
একক টগরের অন্য আরেকটি প্রজাতি এখন খুব চোখে পরে শহরের শৌখিন বাগানে, বাড়ির সামনের লনে, টবে। সেটিকে চাইনিজ টগর বলা হচ্ছে। জংলি টগরের মিনি সংকরণ বলা চলে একে।
অন্য আরেকটি হচ্ছে থোকা টগর। থোকা টগরকে বড় টগরও বলা হয়। এই টগরের পাপড়ির সংখ্যা দুই স্তর মিলিয়ে অনেকগুলি থাকে। থোকা টগরের আছে মিষ্টি সুগন্ধি। এই সুগন্ধি মৌমাছি, প্রজাপতি ইত্যাদি পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে সহজেই। গাছের পাতা একটু বড়। এরা বড় আকারের গুল্ম, কখনও বৃক্ষসম হয়ে উঠে। বড় টগর গাছে ছোট পাখিরা সন্ধ্যার পরে আশ্রয় নেয়।
গলে টগর মালা কাদের ডাগর মেয়ে
যেন রূপের সাগর চলে উজান বেয়ে॥
তার সুডোল তনু নিটোল বাহুর পরে
চাঁদের আলো যেন পিছ্লে পড়ে
ও কি বিজলি পরী এলো মেঘ পাসরি’
চাঁদ ভুলে যায় লোকে তার নয়নে চেয়ে॥
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
টগরের কাণ্ড বা ডাল ভাঙ্গলে দুধের মতো সাদা কষ বের হয় বলে অথবা দুধ সাদা ফুলের রং এর কারণে কোনো কোনো এলাকায় এটিকে "দুধফুল" বলে ডাকে। টগর গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে যেহেতু সাদা দুধের মতো কষ বের হয় সেহেতু একে "ক্ষীরী বৃক্ষ" বলা যায়।
গ্রামের ছোট শিশুরা টগর গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে খেলা করে। ফুল থেকে ফল হয় এবং এই টগরের ফল পেঁকে গেলে ফেঁটে যায়। ফলের ভিতরে থাকে লাল রং এর প্রলেপ ও লাল রং এর ৩ থেকে ৬টি বীজ। গ্রামের মেয়েরা এই লাল রং তাদের ঠোট রাঙ্গাতে ব্যবহার করে।
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা টগর ফুল তাদের পূজায় ব্যবহার করে থাকেন।
টগরের মূল ও শেকড় ওষুধী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শেকড় তেতো ও কটু স্বাদের। এতে কৃমি ও চুলকানি দূর হয়। টগরের কাঁচা ডাল চিবালে দাঁতের ব্যথা সারে।
বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল
চাই না হেনা, আনো আমের মুকুল।।
গোলাপ বড় গরবী এনে দাও করবী
চাইতে যূথী আন টগর — কি ভুল।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ।
=================================================================
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে
অশোক, অর্কিড, অলকানন্দা, অলকানন্দা (বেগুনী), অলকানন্দা (হলুদ), অ্যালামন্ডা (বেগুনী), আকন্দ, আমরুল, অপরাজিতা, আফ্রিকান টিউলিপ,
উগান্ডা শিখা, উর্বশী, উর্বসী, এরোমেটিক জুঁই, এ্যালামন্ডা (বেগুনী)
কলাবতী, কচুরিপানা ফুল, কসমস, কালো পঙ্গপাল, কালো বাসক, কালো বাদুড় ফুল, কর্ণফ্লাওয়ার, কন্টকলতা, ক্যালেনডুলা, কামান গোলা, কাগজ ফুল, কাঁটামুকুট, কন্টকমুকুট, কাঞ্চনার, কাঞ্চনক, কৃষ্ণচূড়া, খাড়া মুরালি
গাঁদা, গেন্ধা, গন্ধা, রক্তগাঁদা, গামারি, গামার, গাম্বার, গোলাপ, গোলাপি আমরুল, গ্লুকাস ক্যাসিয়া, গৌরিচৌরি, গিরিপুষ্প, গুলেটু, গুলমোহর, ঘোড়া চক্কর
চন্দ্রপ্রভা, চন্দ্রমুখী চন্দ্রমল্লিকা (হালকা গোলাপি), চন্দ্রমুখী চন্দ্রমল্লিকা (সাদা), চন্দ্রমুখী চন্দ্রমল্লিকা (লালচে গোলাপি), চন্দ্রমুখী চন্দ্রমল্লিকা (কমলা), চন্দ্রমল্লিকা (হলুদ-সাদা), ছোটপানা
জবা, সাদা জবা, ঝুমকো জবা, ঝুমকা জবা, লঙ্কা জবা, পঞ্চমুখী জবা, বহুদল জবা, রক্ত জবা, হলুদ জবা, ক্রিম জবা, গোলাপী জবা, হাইব্রিড গোলাপী জবা, হাইব্রিড ক্রিম জবা
জারবেরা, জ্যাকারান্ডা, ঝুমকোলতা, ঝুমকো জবা
টগর, ডালিয়া, তমাল, তারাঝরা
দাঁতরাঙ্গা, দাদমর্দন, দেবকাঞ্চন, দোলনচাঁপা, ধুতুরা
নাগেশ্বর, নাগচম্পা, নাগেসর, নাগলিঙ্গম, নীল হুড়হুড়ে, নীল জ্যাকারান্ডা, নীলচূড়া, নীল বনলতা, নীল লতা, নীল-পারুল, নীল-পারুল লতা, নয়নতারা,
পপী, পুন্নাগ, পারুল লতা, পঞ্চমুখী জবা, পুর্তলিকা, পুত্তলিকা, পটপটি
ফাল্গুনমঞ্জরী, ফুরুস (সাদা)
বরুণ, বড়নখা, বিড়াল নখা, বিলাই আঁচড়া, বাদুড় ফুল, বাগানবিলাস, বাসন্তীলতা, বোগেনভিলিয়া, বোতল ব্রাশ, ব্লিডিং হার্ট, বন পালং, বন তেজপাতা, বার্মিজ গোলাপি সোনাইল, ভাট ফুল, ভ্রমরপ্রিয়া
মাধবীলতা, মাধবিকা, মধুমঞ্জরি, মিয়ানমার ফুল,
রঙ্গন, রুক্সিনী, রক্তক, রুদ্রপলাশ, রাজ অশোক, রাজ অশোক, রাধীকা নাচন, রাধাচূড়া, রত্নগণ্ডি, রাণীচূড়া, রসুন্ধি লতা, রুয়েলিয়া, রক্ত জবা, রক্তকাঞ্চন, রক্তপুষ্পক, রক্ত শিমুল
লতা মাধবী, লতা পারুল, লাল আকন্দ, লাল কাঞ্চন, লাল শাপলা, লাল শিমুল
শাপলা (সাদা), শাপলা (লাল), শিউলি, শেফালি, শেফালিকা, শিবজটা, শিবঝুল, শিমুল, শ্বেত অপরাজিতা, শ্বেত পুষ্পা, শ্বেত অকন্দ
সন্ধ্যামালতী, সুলতান চাঁপা, সুখ মুরালি, সোনাপাতি, সিদ্ধেশ্বর, সিদ্ধেশ্বরা, সোকরে
হাতি জোলাপ,
অশোক ফুলের ছবি, নাগেশ্বর ও ভমর, পলাশ ফুটেছে......, ডালিয়া, ধুতরা ফুল, একটি দাঁতরাঙ্গা ফুল
মিষ্টি জলপাইয়ের ফুল, ডালের ফুল, চুকাই ফুল, চুকুর ফুল, সরষে ফুল, সর্রিষা ফুল, তিল ফুল, বিষকাটালি, পাহাড়ি বিষকাটালি,
বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের সচিত্র তালিকা, অশোক সমগ্র, কৃষ্ণচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক, পলাশ ও পারিজাত পরিচিতি, চাঁপা নিয়ে চাপাবাজি, আতা কাহিনী, বিলম্ব, মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ, জল জমানি পাতা, শিউলি
=================================================================